অফুরন্ত বিশ্বাস

নাস্তিক ধর্মে একটা প্রসিদ্ধ নিয়ম হলো কোন কিছুতে বিশ্বাস করা যাবে না। নাস্তিক্য ধর্ম অনুসারে বিশ্বাস এক ধরনের ভাইরাস। তাই নাস্তিকেরা ”বিশ্বাসের ভাইরাস” নামে একটা গ্রন্থ লিখেছে।

এটা ঠিক যে আমরা অনেক কিছু বিশ্বাস করি। আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথেই মিশে আছে বিশ্বাস। বিশ্বাস করে আমরা সুখ পাই, পাই শান্তি। ধরুণ, আমি ছোট বেলায় আমার বাবা-মায়ের কথাকে বিশ্বাস করেছি। তারা বলেছে তুমি যদি পড়ালেখা করো তাহলে তোমার জীবন সুন্দর হবে। তুমি শিক্ষিত মানুষ হবে, তুমি ডাক্তার হয়ে মানুষের চিকিৎসা করবে। এভাবে মানবতার সেবা করবে। আমি যদি আমার বাবা-মায়ের এই কথাগুলো বিশ্বাস করি। তবে নাস্তিক ধার্মিকেরা আমাকে বলবে তুমি বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত। তাহলে তারা আমাকে কি শেখাচ্ছে পিতামাতার কথাকে অবিশ্বাস করতে? যদি প্রত্যেকে তাদের পিতামাতার কথা অবিশ্বাস করে। তাহলে কি আদৌও শিক্ষিত জাতি গঠন হবে? উত্তর হচ্ছে না। আপনি আশ্চর্য হয়ে যাবেন নাস্তিকদের চিন্তাভাবনায়। ‘আমার অবিশ্বাস’ কিতাবে নাস্তিকদের প্রথিতযশা লেখক হুমায়ুন আজাদ বলেছেন, তার এক ছাত্রি সম্পর্কে। তিনি বলেন[আমার এক ছাত্রি একদিন বিচলিত হয়ে কেঁপে কেঁপে বলেছিল, স্যার, বিশ্বাস না করলে আমরা বাঁচবো কি নিয়ে, আমরা কি নিঃস্ব হয়ে যাবো না, শূন্য মনে হবে না নিজেকে? আমাদের কি থাকবে? আমি জানি বিশ্বাস মানুষকে শান্তি দেয়, নির্বোধ সুখে রাখে; কিন্তু শান্তি আর সুখ গর্দভদেরই উপভোগ্য, মানুষের নয়] সম্মানিত পাঠক নাস্তিক্য ধর্ম অনুপাতে যদি বিশ্বাসের দ্বারা আপনি কোন সুখ-শান্তি অর্জন করেন সেটা নাকি গর্দভের পরিচয়। এবার ডাইরেক কিতাব খুলে দিলাম।

পুরো লেখাটা যদি পড়ে থাকেলে একটা জিনিস পরিষ্কার হলেন। তার ছাত্রী যখন বলেছে বিশ্বাস এর দ্বারা সুখ অর্জন হয়। তখন সে পরিস্কার বলেছে সুখ বা শান্তি গর্দভদের কাজ। তাহলে এটা দ্বারা তিনি কি বোঝালেন? তিনি বোঝালেন সুখ বা শান্তির চিন্তা একজন নাস্তিক কখনো করতে পারে না। লেনিন বা মাওসেতুং ঠিক এই কাজ গুলোই করেছিল। প্রচুর মানুষকে তারা হত্যা করেছিল। কারণ তাদের কাছে সুখ বা শান্তি বলে কিছু ছিল না। সম্মানিত পাঠক, যাদের কাছে সুখ বা শান্তি বলে কিছুই নেই তারা কি আমাদের সুন্দর পৃথিবী উপহার দিতে পারে? কখনো দিতে পারে না। বরং তারাই আমাদের সমাজের উন্নতি ও অগ্রগতিকে থামিয়ে দিতে চায় গর্দভ বলে।লেখক হুমায়ুন আজাদ আমার অবিশ্বাস কিতাবের ১৮ নাম্বার পেজে বলেছেন [আমার জীবনকে অর্থ পূর্ণ করে তোলার কোন পূর্বনির্ধারিত উপায় নেই, কোন পবিত্র বা অপবিত্র বই বা কোনো মহাপুরুষ বা প্রবর্তক আমাকে পথ দেখাতে পারেন না। তাঁরা খুঁজেছেন নিজেদের পথ, নিজেদের জীবনকে তাতপর্যপূর্ণ করার পথ;আমি তাদের পথে চলতে পারি না, আমি খুঁজতে চাই আমার পথ, নিজের জীবনকে তাতপর্যপূর্ন করার দায়িত্ব সম্পুর্নরুপে আমার নিজের] লেখাটি ডাইরেক কিতাব খুলে দিলামঃ

লেখক এখানে স্পষ্ট বোঝাচ্ছেন কারো বই পড়া যাবে না৷ পৃথিবীর সকল বই আমাদের পথ দেখাতে পারে না, কোন পবিত্র অপবিত্র মানা যাবে না।

হুমায়ুন আজাদ সাহেব আরো বলেছেন বিশ্বাস হচ্ছে অন্ধকার। বিশ্বাস এর বইগুলো নাকি অন্ধকার এবং বিশ্বাস এর বইগুলো দ্বারাই নাকি জগত অন্ধকারাচ্ছন্ন।

কুরআনে বলা হয়েছে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ভাবে থাকতে।

ﻟَﺎ ﺗَﻘُﻢْ ﻓِﻴﻪِ ﺃَﺑَﺪًﺍ ۚ ﻟَﻤَﺴْﺠِﺪٌ ﺃُﺳِّﺲَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺘَّﻘْﻮَﻯٰ ﻣِﻦْ ﺃَﻭَّﻝِ ﻳَﻮْﻡٍ ﺃَﺣَﻖُّ ﺃَﻥْ ﺗَﻘُﻮﻡَ ﻓِﻴﻪِ ۚ ﻓِﻴﻪِ ﺭِﺟَﺎﻝٌ ﻳُﺤِﺒُّﻮﻥَ ﺃَﻥْ ﻳَﺘَﻄَﻬَّﺮُﻭﺍ ۚ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻳُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻤُﻄَّﻬِّﺮِﻳﻦَ
তুমি কখনো সেখানে দাড়াবে না, তবে যে মসজিদের ভিত্তি রাখা হয়েছে তাকওয়ার উপর প্রথম দিন থেকে, সেটিই তোমার দাঁড়াবার যোগ্য স্থান। সেখানে রয়েছে এমন লোক, যারা পবিত্রতাকে ভালবাসে। আর আল্লাহ পবিত্র লোকদের ভালবাসেন।
Never stand thou forth therein. There is a mosque whose foundation was laid from the first day on piety; it is more worthy of the standing forth (for prayer) therein. In it are men who love to be purified; and Allah loveth those who make themselves pure.

কিন্তু বিশ্বাস দ্বারা লেখার কারণে এই কথাটি অন্ধকার। তাদের নীতিমালা অনুযায়ী একজন মানুষকে অপরিস্কার থাকতে হবে। কুরআনে বলা আছে সুদ খাওয়া হারাম।

ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﻟَﺎ ﺗَﺄْﻛُﻠُﻮﺍ ﺍﻟﺮِّﺑَﺎ ﺃَﺿْﻌَﺎﻓًﺎ ﻣُﻀَﺎﻋَﻔَﺔً ۖ ﻭَﺍﺗَّﻘُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗُﻔْﻠِﺤُﻮﻥَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পারো।
O ye who believe! Devour not usury, doubled and multiplied; but fear Allah; that ye may (really) prosper.

এটা বিশ্বাসের ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত কথা। এই কথা আলো দেখাতে পারে না। সুতরাং একজন মানুষকে সুদ খেতে হবে এরকম অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া যাবে।

অফুরন্ত বিশ্বাসঃ বিশ্বাস করলে আমরা সুখ পাই। আমাদের সুখ খুবি প্রয়োজন, আমরা আমাদের পিতামাতা কে ছোট বেলায় বিশ্বাসের কারণে, অনেকেই ডাক্তার হয়েছি কেও বা আলেম আবার কেও বা ইঞ্জিনিয়ার। আমরা দেশ ও দশের উপকার করছি। এটা সম্ভব হয়েছে শুধু ছোটবেলায় পিতামাতাকে বিশ্বাসের কারণে। আমাদের কাছে কেও আমানত রাখতে চাইলে আমরা বিশ্বাস করেই আমানত নেই।আবার যে আমানত রাখে সেও বিশ্বাস করেই আমানত দেয়। সবি বিশ্বাস, আমাদের জীবনে রয়েছে অফুরন্ত বিশ্বাস। যার এক প্রান্ত থেকে তাকালে অপর প্রান্ত খুজে পাওয়া সম্ভব না।তাই দু হাত তুলে প্রভুকে বলি হে প্রভু আপনাকেও বিশ্বাস করি অফুরন্ত। কারণ আপনাকে বিশ্বাসের মাধ্যমে পেয়েছি কোরানের মতো সংবিধান। যা নিয়ে আমরা সুখ পাই,পাই অফুরন্ত কল্যাণ। দেখতে পারি আলোর পথ, চলতে পারি নিবিড় ভাবে।হে প্রভু আমাদের হৃদয়ে আছে আপনার প্রতি অফুরন্ত বিশ্বাস। বা ইমান ও ইয়াকিন।আলহামদুলিল্লাহ।

দৈনন্দিন জীবনে একজন নাস্তিকের অফুরন্ত বিশ্বাস।

চলুন পাঠক একটু নাস্তিক ধর্মে দৈনন্দিন জীবনে কি কি বিশ্বাস ভাইরাস আছে একটু দেখে নেই।
(১)একজন নাস্তিক যখন ঘুম থেকে ওঠে ব্রাশ করার জন্য যায়। গতকাল যেখানে রেখেছিল সেই যায়গায় যায় প্রচন্ড বিশ্বাস নামক ভাইরাস নিয়ে। এরপর টুথপেস্টে হাত দেয়। বিশ্বাস নামক ভাইরাস নিয়েই পেস্টে চাপ দেয়। এরপর টিউবওয়েল বা ট্যাপে বিশ্বাস নামক ভাইরাস নিয়ে চাপ দেয়।
(২) এরপর সে খাবারের টেবিলে যায়। তার মায়ের প্রতি অগাধ বিশ্বাস নামক ভাইরাস নিয়ে মায়ের রান্না খাওয়ার ইচ্ছায়। এরপর খাবার গলায় আটকে গেলে পানি পান করে। তখন তার বিশ্বাস নামক ভাইরাস কাজ করে। এর আগেরবার যখন খাবার ঠেকে গিয়েছিল। তখন সে পানি পান করেছিল। সুতরাং এবারও পানি পান করতে হবে। এরপর যদি মাছ দিয়ে ভাত খায় তো কাঁটা বেছে খায়। কারণ তার বিশ্বাস নামক ভাইরাস কাজ করে “যদি কাঁটা গলায় আটকে যায়”। তার মন দৃঢ়তার সাথে সায় দেয় কাঁটা গলায় আটকায়। বাহ চমৎকার বিশ্বাস নামক ভাইরাস!
(৩)এরপর বাড়ি থেকে বের হয় অফিসের উদ্দেশ্যে। অফিস যে আগের যায়গাতেই আছে এটার উপর পূর্ণ বিশ্বাস নামক ভাইরাস নিয়েই সেখানে যায়। এরপর সে মাস ভর কাজ করে। যেন তাকে মাস শেষে টাকা দিবে। কত সুন্দর বিশ্বাস নামক ভাইরাস! সরকারী চাকুরী করলে চাকুরী জীবনের শেষে প্রচুর টাকা পাবে। কত উঁচু মানের বিশ্বাসের ভাইরাস! এরপর দিন শেষে বাসায় ফেরে সেই আগের স্থানেই। কি বিশ্বাস নামক ভাইরাস!
(৪)চাকুরীজীবী হলে শুক্রবারে বাজার করে। বাজারে ক্রয় করার জন্য যায় বিভিন্ন ধরনের পন্য। বাজারেই যে এগুলো পাওয়া যাবে এটাও এক ধরনের বিশ্বাস নামক ভাইরাস। শুধু ভাইরাস ভাইরাস ভাইরাস দেখি। নাস্তিক ধর্মে এত বিশ্বাস তার মানে পূর্ণ নাস্তিকতাই ভাইরাস। ভাইরাস থেকে বাচতে নাস্তিক ধর্ম ত্যাগ করুন।

Facebook
WhatsApp
X
Email