কোন জীবন সুন্দর, নাস্তিকতা নাকি আস্তিকতা?

 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আলহামদুলিল্লাহ। সকল প্রশংসা মহান রাব্বুল আ’লামীনের জন্য যিনি আমাদের ইসলামের মত শীতল ছায়া দ্বারা আবৃত করে সুশৃঙ্খল করেছেন। দরুদ ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর।
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক, যার অর্থ শান্তি বর্ষিত হোক আপনার উপর।
নিচের লেখাটি আমি প্রতিটি কথা যুক্তির কষ্টি পাথর দিয়ে যাচাই করে এবং বাস্তব জীবনে উপলব্ধিতার মাধ্যমে অক্লান্ত পরিশ্রম করে লেখাটির গাথনি সাজিয়েছি। প্রতিটি রেফারেন্স শক্তিশালী এবং ভুল প্রমাণ করা প্রায় অসম্ভব। তাই লেখাটি পড়তে একটু নড়েচড়ে বসে নিবেন। আমি একজন প্রকৃত যুক্তিবাদী, বিজ্ঞানমনষ্ক ব্যক্তি হিসেবে মনে করি এই লেখাটি পড়লে আপনার মনের ভেতর নাস্তিকতার বিভ্রম নিয়ে অসংখ্য প্রশ্ন তৈরি করবে এবং আপনার মনে নাস্তিকতা নিয়ে প্রচুর সংশয় তৈরি করবে এবং সত্য বুঝতে আপনাকে সাহায্য করবে। চলুন শুরু করা যাক সত্যের সন্ধানে……
ভূমিকাঃ
অ নেক নাস্তিককে ইদানিং বলতে শোনা যায়, তারা নাকি নাস্তিক যুক্তিবাদী, বিজ্ঞানমনষ্ক লোকদের লেখা পড়ে এরপরে অনেক গবেষণা এবং যাচাই-বাছাই করে নাস্তিক্যধর্মের সত্যতা বুঝতে পেরেছে এবং সে ধরেই নিয়েছে যে নাস্তিকতা সত্য। একই কথা অনেক বিতর্কের সময় ধার্মিক হিন্দুরাও বলে থাকেন যে, তারাও নাকি হিন্দু পরিবারে জন্ম নিয়ে খুব যাচাই-বাছাই করে, গবেষণা করে এরপরেই হিন্দুধর্মের সত্যতা বুঝতে পেরেছে। খ্রিস্টান, ইহুদি, বৌদ্ধ সকলেরই একই কথা। প্রকৃতপক্ষে, নাস্তিক্যধর্মের অন্ধবিশ্বাসী মানুষরা যাচাই-বাছাই করেন না, গবেষণা করেন না বরং আশ্চর্যজনকভাবে নাস্তিক্যধর্মটি গ্রহণ করেন এবং চলে যান চরম হতাশাগ্রস্থ এক জগতে। যেই জগতে নৈতিক বলে কোন কিছু থাকে না। মদ পান, অবাধ যৌনাচার, উশৃংখলতা তাদের নিত্য দিনের একটা রুটিন হয়ে যায়। বিষয়টি একই সাথে দুঃখজনক এবং মর্মান্তিক।
ধর্মের সঠিক সংজ্ঞাঃ
“অনেক সাহিত্যিক আর দার্শনিক ডিকশনারী ঘাটিয়ে, ধর্মের অনেক অনেক সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করে আমি একটি মাত্র সংজ্ঞায় উপনিত হতে পেরেছি যে, সত্য ধর্ম হচ্ছে এক স্রষ্টায় বিশ্বাস (Monotheism) এবং সেই স্রষ্টার নির্দেশিত পথে চলা।
ধর্মের মধ্যে যেসব উপকারী দিকগুলো আমাদের জীবনের জন্য সেসব আসলে ধর্মের একটি বিশেষত্ব, আর এটা কখনোই অধার্মিক জীবন দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়। একটি উদাহরণ এর মাধ্যমে বিষয়টা পরিষ্কার করা যেতে পারে, ধরুন তিনটি বোতল আছে, যার একটি খালি(নাস্তিকতার মত যাতে কোন মোরালিটি নাই) , ২য়টি ময়লাযুক্ত পানি দিয়ে ভর্তি (ইসলাম ব্যতীত সকল ধর্ম), অপরটি পানি ভর্তি কিন্তু এটিতে কিছু বিশেষ ঔষধি আছে যেটা শরীরের জন্য খুব উপকারী। তাই সবচেয়ে ভালো বোতল সেটাই হবে যার মধ্যে ঔষধি আছে, কারণ এর উপকারী দিক হচ্ছে এই বোতলের বিশেষত্ব। আর আমি ধর্মকে এই বোতলের মত বলব, এবং সেটা নির্দিষ্টভাবে ইসলাম।

এর সপক্ষে আমি চারটি যুক্তি পেশ করব। আর সেগুলো হলো:
(১) সামাজিক (Sociological)
(২) দার্শনিক (Philosophical)
(৩) নৈতিক (Moral)
(৪) কূটনৈতিক /রাজনৈতিক (Political)
সকল ধরনের নেগেটিভ এবং খারাপ কাজগুলো ধর্মে বিদ্যমান নয়। এটা ধর্মের একটি বিশেষত্ব।
কিন্তু অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিভিনিটি এর অধ্যাপক কেইথ ওয়ার্ড লেখেন,
‘ এটা খুবই কঠিন যে সুসংগঠিত মানুষের কার্যক্রম দুর্নীতিগ্রস্থ হবে না। ‘
তার এই কথার অর্থ এটাই দাঁড়ায় যে, ধার্মিক জীবন এবং ধর্মবিরোধী জীবন দুটো ক্ষেত্রেই দুর্নীতি সম্ভব।
তবে আমি বলবো ধর্মবিরোধী কথিত মানবতাবাদিরাই মূলত সমাজে বিশৃঙ্খলার মূল কারণ। তার কিছু দৃষ্টান্ত হচ্ছে :
▪️৭ কোটি মানুষকে হত্যা করেছিল চেয়ারম্যান মাও।
▪️নিরীহ ইরাকিদের কে সমসাময়িক যুদ্ধে হত্যা করা হয়েছে।
▪️ভিয়েতনাম যুদ্ধে অনেক মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল।
▪️চায়না এবং ইন্ডিয়াতে নবজাতক মেয়ে শিশুর গনহারে নিধন।
▪️হিরোশিমা – নাগাসাকিতে তিববত গোষ্ঠির জাতিগত নির্মূল।
তাই খুব সহজেই বলা যায় যে সমাজের বিশৃঙ্খলাগুলো ধর্মের দোহাই দিয়ে নয়, বরং সেকুলার অধার্মিক আদর্শের কারনেই।
এবার তাহলে আসুন ধর্মের সপক্ষে আমার ৪টি যুক্তি নিয়ে আলোচনা করা যাকঃ
প্রথমত, সামাজিক কারন:
ধর্ম মানুষের জীবনকে উন্নত করে। কারন এর ফলেঃ
▪️মানসিক অবস্থা উন্নত হয়।
▪️শারীরিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটে।
▪️পরোপকারীতাবোধ সবচেয়ে বেশি থাকে।
▪️এছাড়া জনহিতকর ( জনসেবা মূলক) কাজে বেশি নিয়োজিত থাকে।
প্রমানসাপেক্ষে,
১. হ্যারল্ড কিনেয়, মাইকেল ম্যাকক্লাও এবং ডেভিড লেয়সান তাদের ” হ্যান্ডবুক অব রিলিজিয়ন এন্ড হেলথ” বইটিতে ২০০০ এর বেশি প্রকাশিত গবেষণার বিষয় ছিল ‘ধর্ম ও বিভিন্ন চিকিৎসা অবস্থা ‘। (১) এই গবেষণার ফলাফল যারা ধার্মিক জীবন জাপন করে তাদের ফলাফল:
▪️তারা বেশিদিন বাচে।
▪️শারীরিক সক্ষমতা বেশি থাকে।
▪️যুবক সম্প্রদায়ের মধ্যে মাদক সেবনের পরিমাণ খুবই কম থাকে।
▪️অপরাধমূলক কাজে খুবই কম নিয়োজিত থাকে।
▪️সবচেয়ে কম সংখ্যক আত্মহত্যার প্রবনতা থাকে।
আমাদের রেফারেন্স টি চেক করতে এই লিংক এ প্রবেশ করুনঃhttps://news.gallup.com/poll/108625/more-religious-countries-lower-suicide-rates.aspx

পরস্পর এর মধ্যে সর্বদা একটি পজিটিভ চিন্তাবোধ থাকে।
২. আমেরিকাতে অবস্থিত ‘দি গেলাপ সারভে’ এবং ‘ ন্যাশনাল অপিনিয়ন রিসার্চ সেন্টার’ ধর্মের উপরে গবেষণা করে এই ফলাফল দাড় করায় এবং একমত হয় যে,
‘যারা জীবনে স্রষ্টা কে বেশি গুরুত্ব দেয় তারা তাদের থেকে দ্বিগুন বাচে যারা স্রষ্টা কে গুরুত্ব দেয়না।’ (২)
৩. ‘গ্লোবাল ফিলানথ্রপি’ ২০০৭ সালে বলে,
‘ ধার্মিক মানুষ অধার্মিক মানুষ থেকে বেশি দানশীল।’ (৩)
দ্বিতীয়ত, দার্শনিক কারনঃ
▪️ধর্ম মানুষের জীবনকে উন্নত করে কারন মানুষ এমন এক স্রষ্টার কাছে নিজেকে আত্মসমর্পন করে যিনি সবজান্তা এবং সর্বজ্ঞানী।
▪️তাই, সেই স্রষ্টার নির্দেশাবলী মেনে চলা খুবই যৌক্তিক এবং উপকারী।
তৃতীয়ত, নৈতিক কারনঃ
▪️ধর্ম মানুষের জীবনকে উন্নত করে কারন এটা হচ্ছে মূল্যবোধ আর নৈতিকতার একমাত্র কারন।
▪️স্রষ্টা ছাড়া কোন নৈতিকতা আসতে পারেনা।

▪️কিন্তু এর মানে এই নয় যে তথাকথিত মানবতাবাদীরা এবং নাস্তিক্যধর্মের অন্ধবিশ্বাসীগণ নৈতিক আচরণ দেখাতে পারেনা, অবশ্যই পারে। তবে সম্মানিত পাঠক, মনে রাখবেন এখানে আলোচনা হচ্ছে কোন কাজকে নৈতিক বা অনৈতিক বিচারের ক্ষমতা কে রাখেন? উত্তর কেবলমাত্র একটি আর সেটা হচ্ছে স্রষ্টা। এখানে নৈতিক আচরণ নিয়ে আলোচনা হচ্ছেনা। কারন, নৈতিকতা মানুষ সমাজ থেকে শেখে আর আমাদের সমাজ ধর্মের দ্বারা প্রভাবিত। তবু্ও ধর্মের প্রভাব ছাড়া কোন নাস্তিক যদি অনাকাংখিত ভাবে নৈতিক হয়ে যায় তাকে আমরা ‘accident’ বা ‘দুর্ঘটনা’ বলতে পারি।
▪️স্রষ্টা ছাড়া শুধুমাত্র দুটি সম্ভাব্য উপায়ে নৈতিকতার ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে, আর সেগুলো হলো, ‘ইভোলিউশন’ এবং ‘ সামাজিক চাপ’। কিন্তু এ দুটি উপায়ে নৈতিকতা বিচার করা বা আসা সম্ভব নয়।
কারন হচ্ছে, যদি ‘ইভোলিউশন’ থেকে নৈতিকতা আসতে হয়, তাহলে আমরা জানি মানুষের যে কোন মানসিক বিকাশ বা হ্রাস হচ্ছে ‘ইভোলিউশন’ এর ফলাফল। এর ফলে প্রত্যেক মানুষের বুদ্ধিমত্তা ভিন্ন ভিন্ন, তাই ভিন্ন ভিন্ন মানুষের কাছে নৈতিকতার সংজ্ঞা হবে ভিন্ন ভিন্ন। যেমনঃ কারো কাছে চুরি করা, ডাকাতি করা, ধর্ষন করা খারাপ হলে অন্যের কাছে হবে ভালো। এ থেকে এটা প্রমাণিত হয় যে ‘ইভোলিউশন’ কখনো নৈতিকতা নির্ণয় করতে পারেনা।
আবার, যদি ‘সামাজিক চাপ’ থেকে নৈতিকতা আসতে হয় তাহলেও আসা সম্ভব নয়। কারণ হচ্ছে, এখানে ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক সুবিধার কথা চিন্তা করে নীতি নির্ধারণ করা হয়। যেমনঃ একটি রাষ্ট্রের বিধিনিষেধ। আমাদের সমাজ ধর্মের দ্বারা প্রভাবিত এবং সমাজের নৈতিকতা ধর্মের নৈতিকতা দ্বারা হাজার বছর ধরে সাজানো। সুতরাং, সমাজ থেকে নৈতিকতা নিলে তা মূলত ধর্ম থেকে নেয়া হয়ে যায়।
চতুর্থত, রাজনৈতিক কারণঃ
ইসলাম মানুষের জীবনকে উন্নত করে কারন এর উন্নত ‘অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা’ বিশ্বের যে কোন ‘অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা’ থেকে শ্রেষ্ঠ । বিশেষ করে দারিদ্র্যতা নিরসনে এবং অর্থনৈতিক অবস্থা সক্ষম করনে। সেটা হোক অতীতে বা বর্তমানে।
ইসলাম এর ‘অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার’ ৬টি প্রধানতম বৈশিষ্ট্য হলঃ
১. ইসলামে প্রত্যেকের মৌলিক (খাদ্য, বস্ত্র, বাস স্থান) অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয়। আর ইসলাম এটা করে সত্যনিষ্ঠভাবে, সৎ ভাবে।
২. ইসলাম সুদকে বর্জন করে। কারণ সুদ ব্যবস্থা ধনীকে অধিক ধনী করে আর গরীবকে আরো গরীব।
৩. ইসলামের যাকাত ব্যবস্থা সমাজে ধনী-গরিব ব্যবধান হ্রাস করে।
৪. মজুদকরন নিষিদ্ধ করে যাতে বাজারদর সকলের সাধ্যে থাকে।
৫. প্রাকৃতিক সম্পদ জনগণকে ভোগ করার অধিকার দেয়।
৬. ইসলামে অর্থনীতি নির্ধারন করা হয় স্বর্নের ভিত্তিতে যা সমাজের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কে সক্ষম করে, যেটা মুদ্রা ব্যবস্থা দিয়ে সম্ভব নয়। কারণ, যে কোন মুহুর্তে মুদ্রার ব্যবহার ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। আর অন্যদিকে স্বর্নের মূল্য সাভাবিকভাবে ধ্বংস হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
উপসংহারঃ
তাই ধার্মিক মানে ইসলামিক জীবন ব্যবস্থাই মানুষের মুক্তির একমাত্র উপায়। আর অধার্মিকতা কেবলই ডুবন্ত জাহাজ।”
সকলের সঠিক দিশা পাওয়ার কামনা নিয়ে আজ এ পর্যন্ত।
অমা তৌফিকা ইল্লাহ বিল্লাহ
প্রমাণপঞ্জী:
(১) হ্যারল্ড কিনেয়, মাইকেল ম্যাকক্লাও এবং ডেভিড লেয়সান; “হ্যান্ডবুক অব রিলিজিয়ন এন্ড হেলথ” ‘ধর্ম ও বিভিন্ন চিকিৎসা অবস্থা ‘।
https://www.amazon.com/Handbook-Religion-Health-Harold-Koenig/dp/0195335953
(২) ‘দি গেলাপ সারভে’ এবং ‘ ন্যাশনাল অপিনিয়ন রিসার্চ সেন্টার’ সার্ভে
https://news.gallup.com/poll/152732/religious-higher-wellbeing-across-faiths.aspx
(৩) ‘গ্লোবাল ফিলানথ্রপি’ ২০০৭, সার্ভে
https://link.springer.com/chapter/10.1057/9781137341532_32

 

Facebook
WhatsApp
X
Email