মানবজীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা হলো সম্পদ । সম্পদ ব্যতীত বেঁচে থাকা অসম্ভব । এছাড়া সভ্যতার উন্নতি – অগ্রগতিতেও এর ভূমিকা অনস্বীকার্য । যে – কারণে আল্লাহ তাআলা মানুষকে নির্দেশ দিয়েছেন হালাল সম্পদ ( রিজিক অর্থে ) গ্রহণের । বলেছেন , সালাতের পরেই রিজিক ( সম্পদ ) অন্বেষণে জমিনে ছড়িয়ে পড়তে । [ ১ ] সুতরাং , রিজিকের প্রয়োজনে হলেও সম্পদ লাগবেই । আর সম্পদপ্রাপ্তির অন্যতম মাধ্যম হলো উত্তরাধিকার । ইসলাম পরিপূর্ণ একটি জীবনব্যবস্থা । মানবজীবনের সকল পর্যায়ে ইসলামের পরিপূর্ণ নির্দেশনা রয়েছে । উত্তরাধিকার – সম্পর্কেও রয়েছে ইসলামের পরিষ্কার বন্টননীতি । উত্তরাধিকার আইনে ইসলামে ছেলেসন্তানের তুলনায় মেয়েসন্তান অর্ধেক সম্পদ পেয়ে থাকে । অনেকে প্রশ্ন করেন , উত্তরাধিকার বণ্টননীতিতে ইসলামে কেন ছেলের তুলনায় মেয়েকে অর্ধেক দেওয়া হলো ? কেন তাদের সমপরিমাণ দেওয়া হলো না ? এটা কি বৈষম্য নয় ? প্রথমত , যেহেতু আমরা মুসলিম , সুতরাং , আমরা অবশ্যই বিশ্বাস করি , ইসলাম যে নারীঅধিকারের কথা বলে , নারীকে অন্ধকার থেকে আলোতে টেনে আনে , তাতে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই । পুরুষের মতো নারীর জন্যও ইসলামের সকল বিধান কল্যাণকর এবং একই সাথে ইনসাফপূর্ণও ; কিন্তু কখনো এমন হয় , কোনো কোনো বিধানের কল্যাণ , রহস্য বা ইনসাফের দিকটি আমাদের ক্ষুদ্র দৃষ্টিতে ধরা পড়ে না । আমাদের ক্ষুদ্র মেধা তা নিরূপণ করতে পারে না । আবার কখনো কোনো নিছক প্রশ্নকারী , অমুসলিম বা বিদ্বেষী কোনো লোকের প্রশ্নের সামনে বিব্রত বোধ [ ১ ] [সূরা জুমআ , আয়াত : ১৯]
ও কল্যাণকর করি , উত্তর খুঁজি । ফলে মুসলিম হিসেবে আমরা সেটি ইনসাফপূর্ণ বলে বিশ্বাস করলেও আমরা ইসলামের সেই বিধানের কার্যকারণ অনুসন্ধানে ব্যস্ত থাকি । এখন আমরা ইসলামি উত্তরাধিকার আইনে ছেলের তুলনায় মেয়ের অর্ধেক সম্পদপ্রাপ্তির যে – রহস্য , ইনসাফের যে – মানদণ্ড — তা খুঁজে দেখার চেষ্টা করব । আর এ জন্য বোঝার সুবিধার্থে আমরা প্রথমে একজন ছেলের জবানিতে একটি গল্প শুনি “ ঠিক কত দিন যে মামাবাড়ি যাওয়া হয়ে উঠছে না , মনে – ই নেই । নানা – নানির মৃত্যুর পর মামাবাড়ির পথই যেন ভুলে গিয়েছিলাম । নানা – নানী বেঁচে না থাকলেও মামা যথেষ্ট ভালোবাসেন আমাদের । মা হয়তো কখনো গিয়ে ঘুরে আসেন ; কিন্তু আমার যাওয়া আর হয়ে ওঠে না । ফোনে মামার সাথে কথা হলেই জিজ্ঞেস করেন— ‘ এই কবে আসবি ? কত দিন আসিস না , তোরে দেখি না কত দিন । বড় হয়ে মামাকে ভুলে গেছিস ! ‘ মামার কথা শুনে বেশ খারাপ লাগে । অতীত – স্মৃতি মনে পড়ে যায় । ছোটবেলায় চকলেট , বিস্কুট , খেলনা — এটা , ওটা কত কিছু কিনে দেওয়ার বায়না যে ধরেছি , তার ইয়ত্তা নেই । না দিলে হয় মেরেছি নয়তো কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে নানার কাছে বিচার দিয়েছি । শেষবার যেদিন কথা বললাম , খুব খারাপ লেগেছিল । বলেছিলাম , ‘ মামা , আগামী ঈদে আপনাদের বাড়ি বেড়াতে আসব , ইন শা আল্লাহ । ‘ সেবার ছোটবোনকে সাথে নিয়ে বেড়াতে গেলাম । দীর্ঘদিন পরে আমাদের পেয়ে মামা – মামির আনন্দ যেন আর ধরে না । তাদের কোনো সন্তান নেই । আমাদের পেয়ে যেন তারা সন্তানকে কাছে পেয়েছেন । পরদিন সকালে মামা আমাকে ১০০০ , আর ছোটবোনকে ৫০০ টাকা দিয়ে বললেন — নাও , এটা তোমাদের ঈদবোনাস । আমার দিকে ফিরে বললেন — ওকে নিয়ে মার্কেটে যাও । পছন্দমতো তোমরা কিছু কিনে নিয়ো । আর হ্যাঁ , আব্বু – আম্মুর জন্য সম্ভব হলে কিছু নিয়ো । আমাদের জন্য কিছু আনতে হবে না । ছোটবোনকে নিয়ে মার্কেটে গেলাম । ওর থ্রি পিস দরকার । ৬০০ টাকা দিয়ে ওকে মোটামুটি একটা থ্রি পিস নিয়ে দিলাম । আব্বুর জন্য ৫০০ টাকায় একটি পাঞ্জাবি , আম্মুর জন্য ৫০০ টাকায় শাড়ি । ১৬০০ টাকা শেষ । নিজের জন্য কিছু তো নিতেই হবে । তাই ৪০০ টাকায় কোনোমতে পাঞ্জাবি নিলাম একটা । মামা ১০০০ টাকা দিলেও এপর্যন্ত ২০০০ টাকা শেষ । আমার নিজের যে ১০০০ ছিল হাতখরচ , সেটাও উধাও । ছোটবোন বলে উঠল , তার কিছু কসমেটিক্স প্রয়োজন । বললাম , আমার তো টাকা শেষ । ও বলল , আমার কাছে আছে । ১০০ টাকার কসমেটিক্স কেনার পর বলল , ভাইয়া মামির জন্য তো কিছু নেওয়া উচিত । বললাম , টাকা তো নেই , কী দিয়ে কেনব ? ও বলল , আচ্ছা , আমি তাহলে কিছু নিই । এরপর ৫০ টাকায় একটি মেহেদি নিল । হিসাবটা একটু খেয়াল করি , ছেলেকে দেওয়া হয়েছে ১,০০০ টাকা । তার পকেটসহ ব্যয় করেছে ২,০০০ টাকা । মামা – মামির জন্য কিছুই নিতে পারেনি । অন্যদিকে তার বোনকে দেওয়া হয়েছে ৫০০ টাকা । তার সাকুল্যে ব্যয় হয়েছে ১৫০ টাকা । আরও আছে ৩৫০ টাকা । মামা – মামির জন্য ‘ কিছু আনতে হবে না ‘ বললেও তার মনে হলো — তার প্রতি মামি কিছুটা ভারমুখ করে আছেন । অন্যদিকে তার বোন তার মামির জন্য যে – মেহেদিটা এনেছে , সেটা মামি আর সে — দুজনে মিলেই ভাগাভাগি করে ব্যবহার করছে । মেহেদি আনায় তার বোনের প্রতি মামি ভীষণ খুশি । অথচ মামির পেছনে মেহেদি বাবদ ছেলেটির ছোটবোনের ব্যয় সাকুল্যে ৫০ টাকা । আরও হিসেব করলে বলা যায় ২৫ টাকা । কারণ , মেহেদি তো দুজনেই ব্যবহার করেছে । মামির খুশিতে মামাও খুশি । কেবল মনঃকষ্ট তাদের ছেলেটির ওপর । কারণ , তাকে ১,০০০ টাকা দেওয়া হলেও তাদের জন্য কিছুই আনেনি সে । আর তার ছোটবোনকে মাত্র ৫০০ টাকা দেওয়া হলেও সে কিছু এনেছে । ‘ এই প্রতীকী গল্পই আসলে ইসলামে সম্পদ বন্টননীতির মূল রহস্য প্রকাশ করে । অর্থাৎ , ছেলে যা পাবে তার চেয়ে অনেক বেশি ( তা যে – করেই হোক ) ব্যয় করতে হবে । আর নারী যা পাবে সে তার ইচ্ছেমতো ব্যয় করবে । কারও জন্য ব্যয় করতে সে বাধ্য নয় । এখানে গল্পের মামির যে ভারমুখো ভাব , তার কার্যকারণ কতটা যৌক্তিক ? মনখারাপের পেছনের যুক্তি আসলে কতটা শক্ত ? আদতে কোনো ভিত আছে কি এর ? সত্যি করে বলতে — কম কি আসলে ভাইটাকে দেওয়া হয়েছে , না বোনকে ? মন খারাপ করা উচিত কার ? বোনের প্রাপ্ত টাকা তো রয়েই গেছে । কারণ , তার প্রয়োজনীয় জিনিস পেয়েছে ভাইয়ের টাকায় । এভাবে তারা কখনো পায় বাবা , স্বামী অথবা সন্তানের টাকায় । তাহলে কম আসলে কে পায় ? সত্যি কি , এটা সবাই জানেন , একটু বেশি পেয়ে অনেক ঝামেলা বহন করার চেয়ে একটু কম পেয়ে দায়িত্বমুক্ত থাকাই নিরাপদ ; ১০০ টাকা পেয়ে ২০০ টাকা ব্যয়ের চেয়ে ৫০ টাকা পেয়ে তা জমানোই ভালো । কুরআনে কারিমে বণ্টন – নির্দেশনা মূলত কিছু ক্ষেত্রে নারীকে ইসলাম অর্ধেক সম্পত্তি দিয়েছে । আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেওয়া হয়েছে সমান বা বেশি । এ বিষয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব । তবে , তার আগে জেনে নিই , কুরআনে কারিমের ঠিক কোথায় কোথায় মিরাস ( উত্তরাধিকার ) সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে :
কুরআনে কারিমে তিনটি আয়াত রয়েছে — যেখানে সবিস্তারে ও স্পষ্টভাবে উত্তরাধিকার সম্পত্তির বণ্টন – সম্পর্কিত বর্ণনা রয়েছে : সূরা নিসা : ১১ , ১২ ও ১৭৬ নম্বর আয়াতে ।
এক . সূরা নিসার ১১ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন- “ আল্লাহ তোমাদের সন্তানদের উত্তরাধিকারগত সম্পদ সম্পর্কে নির্দেশ দিচ্ছেন , এক পুত্রের অংশ দুই কন্যার সমান ; কিন্তু দুইয়ের বেশি কন্যা থাকলে তারা পাবে পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই তৃতীয়াংশ , আর মাত্র এক কন্যা থাকলে তার জন্য অর্ধাংশ । মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকলে তার অর্থাৎ , মৃত ব্যক্তির পিতা ও মাতা প্রত্যেকেই পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ । আর যদি মৃত ব্যক্তি নিঃসন্তান হয় । এবং শুধু তার পিতা – মাতা উত্তরাধিকারী হলে তার মায়ের জন্য তিন ভাগের এক ভাগ , আর মৃত ব্যক্তির ভাইবোন থাকলে মা পাবে ১/৬ ভাগ । আর এ – সব ( হিসেব ) মৃত ব্যক্তির অসিয়তপালন এবং তার ঋণ শোধের পর প্রযোজ্য হবে । তোমাদের পিতা ও সন্তানদের মধ্যে কে তোমাদের জন্য বেশি উপকারী তা তোমরা জানো না , এও আল্লাহর নির্দেশ । নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময় । ‘
দুই . একই সূরার ১২ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন- ‘ তোমাদের স্ত্রীদের রেখে যাওয়া সম্পত্তির অর্ধেক তোমাদের জন্য , যদি তাদের কোনো সন্তান না থাকে ; আর যদি সন্তান থাকে , তবে তোমাদের জন্য তাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তির এক চতুর্থাংশ , তাদের কৃত অসিয়ত কিংবা ঋণ পরিশোধের পর । যদি তোমাদের কোনো সন্তান না থাকে তবে তোমাদের ছেড়ে যাওয়া সম্পত্তির এক – চতুর্থাংশ স্ত্রীদের জন্যে । আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে , তবে তোমাদের কৃত অসিয়ত কিংবা ঋণ পরিশোধের পর তাদের জন্যে থাকবে ওই সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ । যদি পিতা – মাতাহীন ও সন্তানহীন কোনো পুরুষ বা নারীর শুধু একটি ভাই বা একটি ভগ্নি থাকে , তবে প্রত্যেকের জন্য ছ’ভাগের এক ভাগ । যদি তারা তার চেয়ে অধিক হয় , তবে কৃত অসিয়ত কিংবা ঋণ পরিশোধের পরে কারও অনিষ্ট না করে সকলেই তৃতীয়াংশে শরিক হবে । এ হলো আল্লাহর বিধান , আল্লাহ সর্বজ্ঞ , সহনশীল । ‘
তিন . সূরা নিসার ১৭৬ নং আয়াতে এসেছে— মানুষ আপনার নিকট ফাতওয়া জানতে চায় ; অতএব , আপনি বলে দেন , আল্লাহ তোমাদের ‘ কালালাহ’র মিরাস – সংক্রান্ত সুস্পষ্ট নির্দেশ জানিয়ে দিচ্ছেন : যদি কোনো পুরুষ মারা যায় এবং তার কোনো সন্তানাদি না থাকে এবং শুধু একজন বোন থাকে , তাহলে সে পাবে তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তির অর্ধেক অংশ এবং তার বোন যদি নিঃসন্তান হয় , ( এবং একজন ভাই থাকে ) তবে তার ভাই তার উত্তরাধিকারী হবে । তার বোন দুইজন থাকলে তাদের জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই তৃতীয়াংশ । পক্ষান্তরে যদি ভাই ও বোন উভয়ই থাকে , তবে একজন পুরুষের অংশ দুইজন নারীর সমান । তোমরা যেন বিভ্রান্ত না হও , এ জন্য আল্লাহ তোমাদের সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছেন । আর আল্লাহ হচ্ছেন সর্ব বিষয়ে পরিজ্ঞাত । ‘ এছাড়াও কুরআনের আরও যে – সব জায়গায় উত্তরাধিকার সম্পত্তির বণ্টন সম্পর্কিত আয়াতসমূহ হলো : সূরা বাকারার ১৮০ ও ২৪০ আয়াতে , সূরা নিসার ৭-৯ , ১৯ এবং ৩৩ নাম্বার আয়াতে এবং সূরা মায়িদার ১০৬-১০৮ নাম্বার আয়াত । কে পাবেন কতটুকু ? নারী শব্দটি ব্যাপক অর্থবহ । এটি কেবল মেয়েকেই ধারণ করে না ; বরং এর অর্থ ত্রী , মা , মেয়ে , বোন , নানি , দাদি , ফুফু বা খালাকেও বোঝায় । নারীরা সব সময় – ই কি ছেলেদের তুলনায় অর্ধেক সম্পত্তি পান , না কখনো সমান আবার কখনো ছেলেদের তুলনায় বেশিও পান ? এখানে বেশকিছু ক্যাটাগরি রয়েছে । আমরা কেবল তাদেরই আলোচনা করতে চাই — যারা সম্পত্তি পাবেন । তাই
প্রথমত এগুলোকে ৩ টি ভাগে উল্লেখ করতে চাই
[ ১ ] : বারো অবস্থায় নারী একজন পুরুষের চেয়ে বেশি পেয়ে থাকেন । যেমন—
[ ১ ] কোনো নারী তার স্বামী এবং একজন মেয়েসন্তান রেখে মৃত্যুবরণ করলে মেয়ে তার মায়ের সম্পদের অর্ধেক পাবে আর স্বামী পাবে এক চতুর্থাংশ ।
[ ২ ] স্বামীর সাথে কোনো নারীর দুই মেয়ে থাকলে দুই মেয়ে পাবে দুই তৃতীয়াংশ আর স্বামী এক চতুর্থাংশ ।[ ১ ] এই অংশটি রচনার সময় মিসরের জাতীয় ফাতওয়া বোর্ডের একটি তুলনামূলক পর্যালোচনার অনুসরণ করা হয়েছে । আশা করি , এই বিশ্লেষণে পাঠক দারুণভাবে উপকৃত হবেন ।
[৩] মৃত নারী যদি একাধিক ছেলেসন্তানের সাথে এক মেয়ে রেখে যায় তাহলে সে ভাইদের থেকে বেশি পাবে ।
[৪ ] যদি মত নারী তার স্বামী , বাবা , মা ও দুই মেয়ে রেখে যায় তবে দুই মেয়ে দুই তৃতীয়াংশ সম্পদ পাবে ; কিন্তু ঠিক একই অবস্থায় যদি মেয়ের পরিবর্তে দুই ছেলে থাকত তবে তারা নিশ্চিতভাবে দুই মেয়ের তুলনায় কম পেত । কেননা , এখানে অন্যান্য ওয়ারিসদের তাদের নির্ধারিত অংশ দেওয়ার পর যা বাকি থাকে সেটুকুই হলো ছেলের অংশ । সুতরাং , স্বামী পাবে এক চতুর্থাংশ , বাবা ও মা উভয়ে পাবে এক ষষ্ঠাংশ করে এবং বাকি অংশ পাবে দুই ছেলে — যা দুই তৃতীয়াংশ তো নয়ই , বরং অর্ধেকের চেয়েও কম ।
[ ৫ ] ঠিক একই ধরনের আরেকটি অবস্থা দুই সহোদর বোনের ক্ষেত্রে । যদি মৃত নারীর ওয়ারিসদের মধ্যে স্বামী , দুই সহোদর বোন / মেয়ে এবং মা থাকে তখন দুই বোন দুই তৃতীয়াংশ সম্পদ পায় ; কিন্তু ঠিক একই অবস্থায় যদি বোনের জায়গায় দুই ভাই থাকত তখন ওই দুই ভাই মিলে এক তৃতীয়াংশের বেশি পেত না ।
[ ৬ ] তেমন একই অবস্থায় বৈমাত্রেয় দুই বোন বৈমাত্রেয় দুই ভাইয়ের চেয়ে বেশি পায় ।
[ ৭ ] অনুরূপ যদি কোনো নারীর ওয়ারিসদের মধ্যে স্বামী , বাবা , মা ও মেয়ে থাকে তবে মেয়ে মূল সম্পদের অর্ধেক পাবে ; কিন্তু ঠিক একই অবস্থায় ছেলে থাকলে পেত তার চেয়ে কম । যেহেতু তার প্রাপ্যাংশ হলো অংশীদারদের দেওয়ার পর অবশিষ্টাংশ ।
[ ৮ ] কোনো নারীর ওয়ারিস যদি হয় স্বামী , মা ও এক সহোদর বোন তখন ওই সহোদর বোন অর্ধেক সম্পদ পাবে — যা তার স্থানে সহোদর ভাই হলে পেত না ।
[ ৯ ] ওয়ারিস যদি হয় স্ত্রী , মা , বৈপিত্রেয় দুই বোন এবং দুই সহোদর ভাই তখন দূরের আত্মীয় হওয়া সত্ত্বেও বৈপিত্রেয় দুই বোন দুই সহোদরের চেয়ে বেশি পাবে । যেহেতু বৈপিত্রেয় বোনদ্বয় পাবে এক তৃতীয়াংশ , আর দুই সহোদর পাবে অবশিষ্টাংশ — যা এক তৃতীয়াংশের চেয়েও কম ।
[ ১০ ] যদি কোনো মৃত নারীর স্বামী , বৈপিত্রেয় বোন ও দুই সহোদর ভাই থাকে সেক্ষেত্রে বৈপিত্রেয় বোন এক তৃতীয়াংশ পাবে । অথচ এই দুই সহোদর অবশিষ্টাংশ থেকে যা পাবে তা ওই বোনের এক চতুর্থাংশেরও কম ।
[ ১১ ] ওয়ারিস যদি হয় বাবা , মা ও স্বামী এক্ষেত্রে ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুর মত অনুসারে মা পাবে এক তৃতীয়াংশ , আর বাবা পাবে এক ষষ্ঠাংশ অর্থাৎ , মায়ের অর্ধেক ।
[ ১২ ] স্বামী , মা , বৈপিত্রেয় বোন ও দুই সহোদর ভাই ওয়ারিস হলে এক্ষেত্রে ওই বোন দূর সম্পর্কীয় আত্মীয় হওয়া সত্ত্বেও সহোদর ভাই দুজনের দ্বিগুণ পাবে ।
দশ অবস্থায় একজন নারীর অংশ পুরুষের সমান ।
যেমন—
[ ১ ] ছেলের ছেলে থাকলে পিতা – মাতা সমান অংশ পাবে ।
[ 2 ] বৈপিত্রেয় ভাই – বোন সব সময় সমান অংশ পায় ৷
[ ৩ ] বৈমাত্রেয় ভাই – বোন থাকলে সব ধরনের বোনেরা ( সহোদরা , বৈপিত্রেয় ও বৈমাত্রেয় ) বৈপিত্রেয় ভাইয়ের সমান পাবে ।
[ ৪ ] শুধু ঔরসজাত মেয়ে ও মৃতের ভাই একসাথে থাকলে উভয়ে সমান অংশ পাবে । ( মেয়ে পাবে অর্ধেক আর বাকি অর্ধেক পাবে চাচা ) ।
[ ৫ ] ‘ নানি ‘ বাবা ও ছেলের সাথে সমান অংশ পায় ।
[ ৬ ] মা ও বৈপিত্রেয় দুই বোন স্বামী ও সহোদর ভাই এর সাথে সমান অংশ পায় ।
[ ৭ ] ‘ সহোদর বোন ‘ স্বামীর সাথে ওয়ারিস হলে সহোদর ভাইয়ের সমান অংশ পাবে । অর্থাৎ , সহোদর বোনের পরিবর্তে সহোদর ভাই হলে যে – অংশ পেত ঠিক সহোদরাও একই অংশ পাবে । অর্থাৎ , মূল সম্পদের অর্ধেক পাবে ।
[ ৮ ] বৈমাত্রেয় বোন সহোদর ভাইয়ের সমান অংশ পায় যদি মৃত ব্যক্তির স্বামী , মা , বৈপিত্রেয় এক বোন এবং একজন সহোদর ভাই থাকে । এ অবস্থায় স্বামী মূল সম্পদের অর্ধেক , মা এক ষষ্ঠাংশ , বৈপিত্রেয় ভাই এক ষষ্ঠাংশ এবং বাকি এক ষষ্ঠাংশ পাবে সহোদর ভাই ।
[ ৯ ] নির্দিষ্ট অংশধারী ওয়ারিস এবং আসাবা – সূত্রে পাওয়ার মতো কেউ না থাকলে নিকটতম রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়রা সমান অংশ পাবে । যেমন : মেয়ের ছেলে , মেয়ের মেয়ে , মামা ও খালা ছাড়া অন্য কোনো ওয়ারিস না থাকলে এদের সবাই সমান অংশ পাবে ।
[ ১০ ] তিন প্রকারের নারী এবং তিন প্রকারের পুরুষ কখনো সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত হয় না । এক্ষেত্রেও একজন নারী সমান অধিকার ভোগ করছে পুরুষের ।
চার অবস্থায় নারী মিরাস পায় ; কিন্তু তার সমমানের পুরুষ বঞ্চিত হয় ।
যেমন-
[ ১ ] ওয়ারিস যদি হয় স্বামী , বাবা , মা , মেয়ে ও নাতনি ( ছেলের মেয়ে ) এক্ষেত্রে নাতনী এক ষষ্ঠাংশ পাবে । অথচ একই অবস্থায় যদি নাতনির পরিবর্তে নাতি ( ছেলের ) ছেলে ) থাকত তখন এই নাতি কিছুই পেত না । যেহেতু নির্ধারিত অংশীদারদের দিয়ে অবশিষ্টাংশই তার প্রাপ্য ছিল । অথচ এ অবস্থায় কিছুই অবশিষ্ট থাকে না । তাই তার প্রাপ্তির খাতাও থাকে শূন্য ।
[ ২ ] স্বামী , সহোদর বোন ও বৈমাত্রেয় বোন থাকা অবস্থায় বৈমাত্রেয় বোন এক ষষ্ঠাংশ পাবে । অথচ তার স্থানে যদি বৈমাত্রেয় ভাই থাকত তবে সে কিছুই পেত না , যেহেতু তার জন্য নির্ধারিত অংশ নেই ।
[ ৩ ] অনেক সময় দাদি মিরাস পায় , কিন্তু দাদা বঞ্চিত হয় ।
[ ৪ ] মৃত ব্যক্তির যদি শুধু নানা ও নানিই ওয়ারিস হিসেবে থাকে তখন সব সম্পত্তি পাবে নানি । নানা কোনোকিছুই পাবে না ।
নারী কেবল চার অবস্থায় পুরুষের অর্ধেক পায় ।
যেমন—
[ ১ ] ছেলে থাকা অবস্থায় মেয়ে ও নাতি ( ছেলের ছেলে ) থাকা অবস্থায় নাতনি ( ছেলের মেয়ে ) অর্ধেক পায় ।
[ ২ ] ছেলে ও স্বামী বা স্ত্রী না থাকলে ‘ মা ‘ পিতার অর্ধেক পায় ।
[ ৩ ] ‘ সহোদরা বোন ‘ সহোদর ভাইয়ের সাথে ওয়ারিস হলে অর্ধেক পায় ।
[ ৪ ] ‘ বৈমাত্রেয় বোন ’ বৈমাত্রেয় ভাইয়ের সাথে ওয়ারিস হলে । ১ ইসলামি উত্তরাধিকার আইনে যাদের অংশ নির্ধারিত , তাদের বলা হয় ‘ জাবি ফুরুজ ‘ । এরা নেওয়ার যদি কিছু থাকে তবে তাই যারা পায় অথবা জাবিল ফরজদের [ ১ ] হুকুকুল মারআতি ফিল – মীরাস , মুহাম্মাদ আফীফ ফুরকান , পৃষ্ঠা : ১৬-২২ ] নেওয়ার পরে কিছুই বাকি না থাকলে যারা বঞ্চিত হয় তাদের বলা হয় ‘ আসাবা ‘ ।
নির্ধারিত অংশ আছে ৮ জন নারীর জন্য এবং ৪ জন পুরুষের জন্য । নারী ৮ জন হলো ; স্ত্রী , কন্যা , ছেলের কন্যা , সহোদর বোন , বৈমাত্রেয় বোন , বৈপিত্রীয় বোন , মা এবং দাদি / নানি । আর পুরুষ ৪ জন হলো ; পিতা , দাদা , বৈপিত্রীয় ভাই এবং স্বামী । এখানেও নারীদের আধিক্য । একেবারে দ্বিগুণ । তাহলে আমরা স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি যে , অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উত্তরাধিকার – সূত্রে একজন নারী একজন পুরুষের সমান বা বেশি সম্পত্তি পেয়ে আসছে । তবে কিছু সময় তিনি অর্ধেক পাচ্ছেন । এগুলো হিসেব বাদ দিয়ে এই ৪ টা পয়েন্টকে সামনে রেখে কিছু নারীবাদী ইসলামের দিকে তির্যক মন্তব্য ছুড়ে দেন । এবার আমরা ইসলামের এই প্রজ্ঞাপূর্ণ বিধানের কারণ খুঁজে দেখার চেষ্টা করব ।
প্রথমত : অর্থ – বিত্ত যার প্রয়োজন পড়বে , তাকেই দেওয়া উচিত । যার প্রয়োজন হবে না , তাকে দেওয়ার কোনো দরকার নেই । এরপরও যদি দেওয়া হয় , তাহলে তা হবে অতিরিক্ত । যেমন , ধরুন , আপনি পিপাসায় কাতর । এখন কেউ আপনাকে দামি মধু এনে দিল । আপনি তাতে খুশি না বিরক্ত হবেন ? আবার আপনার বন্ধুর কাছে পানি আছে । সে আপনার কাছে এলো খাবার চাইতে । এখন আপনি কি তাকে আরও পানি দেবেন নাকি খাবার দেবেন ? অবশ্যই তাকে আপনার খাবার দেওয়া উচিত । আর আপনার পিপাসায় আপনাকে পানি দেওয়া উচিত । মধু , খাবার বা অন্যকিছু নয় । কারণ , পানির চাহিদা খাবারে মিটবে না । হ্যাঁ , যদি পানির সাথে খাবার বা অন্যকিছু দেয় , তাহলে তো সোনায় সোহাগা । ইসলাম নারীর ক্ষেত্রে এই সোনায় সোহাগার কথাই বলেছে । অর্থাৎ , ইসলাম নারীর সকল অর্থনৈতিক প্রয়োজন মেটাবার দায়িত্ব পুরুষকে দিয়েছে । নারীকে বানিয়েছে সংসারের রানি । পুরুষ উপার্জন করবে , আর নারী তা ভোগ করবে । নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি একজন নারীর জীবনকে আমরা কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করেছি । নারী কখনো মেয়ে , কখনো বোন , কখনো মা , স্ত্রী , নাতনি , কখনো – বা ভাতিজি । সর্বোপরি নারী সমাজেরই অংশ , দেশের নাগরিক । এ সকল অবস্থায় নারীর অর্থনৈতিক দায়িত্ব , যেমন : খাদ্য , বস্ত্র , বাসস্থান শিক্ষা , চিকিৎসা এবং নিরাপত্তা — এগুলোর দায়িত্ব পুরুষের । সে থাকবে রানির আসনে । পুরুষ হবে তার বডিগার্ড , তার প্রয়োজনীয় সকল কিছুর সরবরাহকারী । তাদের অর্থনৈতিক প্রয়োজনের সময়কে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি ।
[ ক ] বিবাহপূর্ব অবস্থা ইসলামি শরিয়ত একজন নারীর জন্মের পর থেকে বিয়ে পর্যন্ত মেয়ের খাদ্য , কজ , বাসস্থান , শিক্ষা , চিকিৎসা এবং নিরাপত্তা দেওয়ার সকল দায়িত্ব তার বাবার কাঁধে তুলে দিয়েছে । বাবার অনুপস্থিতিতে ভাই তা পূরণ করবে । তাকে তার সকল চাহিদা মেটাতে কোনো কাঠখড়ি পোড়াতে হবে না । একদম বিয়ে পর্যন্ত সে এই সুযোগ পাবে । রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন , যে – ব্যক্তি তার তিনজন কন্যার ভরণপোষণ করল , তাকে শিষ্টাচার শেখাল , ( সৎ পাত্রের ) সাথে বিবাহ দিল এবং তাদের সাথে সদাচরণ করল — তার জন্য জান্নাত অবধারিত হলো । সারকথা হলো , মেয়ে বা বোনের জন্মের পর থেকে খাদ্য , বস্ত্র , বাসস্থান , শিক্ষা , চিকিৎসা , নিরাপত্তাদান এবং সদাচরণসহ সৎ পাত্রের সাথে বিবাহদান বাবা বা ভাইয়ের কেবল কর্তব্য নয় , দায়িত্বও ।
[ খ ] বিবাহ – পরবর্তী অবস্থা বিবাহের পর স্ত্রীর সকল দায়িত্ব স্বামীর । স্বামী তার সকল প্রয়োজন মেটাতে বাধ্য । শুধু তাই নয় ; বরং বিয়ের সময় একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মোহর স্বামী তাকে প্রদান করে । এই মোহরগ্রহণ নারীর জন্য একটি চমৎকার গিফট আর তা প্রদান করা স্বামীর জন্য ফরজ বা আবশ্যকীয় বিধান । মোহর ছেড়ে দেওয়ার জন্য স্ত্রীকে জোর করা বৈধ নয় আর এ জন্য অনুরোধ করা কাপুরুষতা । মহান আল্লাহ বলেন- “ আর তোমরা আনন্দচিত্তে স্ত্রীদের মোহর দিয়ে দাও । যদি তারা নিজেরাই সন্তুষ্টচিত্তে মোহরের কিছু অংশ ছেড়ে দেয় তবে তোমরা তা সানন্দে গ্রহণ করতে পারো । ” এবার তুলনামূলক আলোচনা করা যাক — ছেলে যখন সাবালক তখন তার দায়িত্ব নিজের ; কিন্তু মেয়ের ক্ষেত্রে কেবল সাবালিকা নয় বরং বিবাহের আগ পর্যন্ত তার [ ১ ] সুনানু আবি দাউদ : ৫১৪৭ [ ২ ] সূরা নিসা , আয়াত : ০৪ সকল দায়িত্ব বাবা অথবা ভাইয়ের । একজন ছেলে যখন বিয়ে করে তখন তার স্ত্রীর জন্য মোহরের অর্থের ব্যবস্থা করতে হয় ; অথচ নারীর কোনো ঝামেলা নেই ; বরং সে হয় তা গ্রহীতা । পক্ষান্তরে বিয়ের পর নিজের দায়িত্ব , স্ত্রীর দায়িত্ব , ছেলে – মেয়ে হলে তার দায়িত্ব প্রয়োজন হলে পিতা – মাতা এবং ভাই – বোনের সকল দায়িত্বও পুরুষকে নিতে হয় । এবার অর্থের আবশ্যকীয়তা হিসেব করি । নারীর কখনোই অর্থের আবশ্যকতা নেই ; কারণ , তার প্রয়োজনপূরণের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেই ; বরং তা অন্য পুরুষের কাঁধে । আর পুরুষের জন্য কতটুকু প্রয়োজন তা একটু হিসেব করি । নিজের জন্য , স্ত্রীর মোহরের জন্য , স্ত্রীর বাকি জীবনের জন্য , অনাগত সন্তানের প্রত্যেকের জন্য ( ধরি , সন্তান ৪ জন ) , প্রয়োজনে বাবার জন্য , মায়ের জন্য , যদি ২ জন ভাই – বোন থাকে তাদের জন্য একটি করে ভাগ । মোটামুটি ১১ ভাগের ব্যবস্থা তাকে করতে হবে । যুক্তি বলে , নারীর জন্য কোনো ভাগের প্রয়োজন নেই , পুরুষের জন্য ১১ টি ভাগ রাখা প্রয়োজন । অথচ ইসলাম নারীকে দিয়েছে তিন ভাগের এক ভাগ । ভাইকে দিয়েছে দুই ভাগ । নারী এই এক ভাগ এবং স্বামীর থেকে পাওয়া মোহরসহ আরও যেখানে যা পাবে তা সংরক্ষিতই থাকবে । অন্যদিকে পুরুষকে দুই ভাগ পেয়েও বাকি ৯ ভাগের জন্য সারা দিন রোদে পুড়ে , বৃষ্টিতে ভিজে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আয় করতে হবে । আলোচনা মনে হয় একটু তাত্ত্বিক হয়ে যাচ্ছে । উদাহরণের মাধ্যমে সহজে বোঝার চেষ্টা করি । আচ্ছা ধরি এক লোকের দুই সন্তান ; এক মেয়ে ও এক ছেলে । তিনি ৩ লক্ষ টাকার সম্পত্তি রেখে মারা গেলেন । পুত্র ২ লক্ষ টাকার সম্পত্তির উত্তরাধিকার লাভ করল এবং কন্যা লাভ করল ১ লক্ষ টাকার সম্পত্তি । ২ লক্ষ টাকা লাভ করার পর পুত্রের দায়িত্ব হলো , তার নিজের এবং বোনসহ নিজের পরিবার দেখাশোনা করা । এ কাজে তার পুরো ২ লক্ষ টাকার সম্পত্তি খরচ হয়ে যেতে পারে । আবার কিছু থাকতেও পারে । যেমন : তার নিজের এবং বোনের পড়াশোনাসহ অন্যান্য খরচ বাবদ দেড় লাখ টাকা শেষ । এবার বোনের বিয়ে দিতে অনুষ্ঠানের বিভিন্ন খরচ লাগল ৫০ হাজার টাকা । ভাইয়ের দুই লাখ শেষ । ভাইয়ের নিজের বিয়ের জন্য এবার এক লাখ টাকা জোগাড় করতে হবে । ধরে নিই , ঋণ নিয়ে শুরু করল নতুন জীবন । অন্যদিকে বোনের নিজের এক লাখ – সহ মোহরের এক লাখ মিলিয়ে নতুন জীবনে বোন দুই লাখ টাকার মালিক আর ভাই এক লাখ টাকা ঋণী । বোনের দায়িত্ব স্বামী নে আর ভাই নিচ্ছে নিজের এবং আরেক মেয়ের দায়িত্ব । ইসলামি আইন অনুসারে , বোন কারও জন্য এক পয়সাও খরচ করতে না চাইলে পুরো দুই লাখ টাকাই সে নিজের কাছে রেখে দিতে পারে । ব্যবসায় বিনিয়োগ বা কাউকে দানও করতে পারে । এই টাকা সে তার স্বামীকেও দিতে বাধ্য নয় । ইচ্ছে হলে দিতে পারে আবার নাও দিতে পারে । উলটো নারীর জন্য তার সকল প্রয়োজনীয় অর্থ স্বামীর থেকে নেওয়ার পূর্ণ অধিকার রয়েছে। বিজ্ঞ পাঠক,
বিজ্ঞ পাঠক , আপনিই বলুন , সম্পত্তি কি নারী কম পেল , না পুরুষ ? সমান সম্পদ দিয়ে নারীকে যদি কাঠফাটা রোদে লাঙলচাষের দায়িত্ব দেওয়া হয় বা রিক্সা চালাতে দেওয়া হয় অথবা অন্য কোনো কঠিন কাজে বাধ্য করা হয় তবে সেটা কি তার অধিকার দেওয়া হলো ? এরপরও উলটো তার ভাই যদি বলে , না , আমাকে তো অনেক কম সম্পদ দেওয়া হয়েছে । তখন তার কেমন লাগবে ? দ্বিতীয়ত : অর্থ উপার্জনের দায়িত্ব পুরুষের । যেমন : ব্যাবসা – বাণিজ্য , কৃষিকাজ , বা চাকরি – বাকরি করে অর্থ উপার্জন করা । এ সকল উপার্জনের ক্ষেত্রেই আয়ের জন্য অর্থ প্রয়োজন । কেননা , Money begets money টাকায় টাকা আনে । আপনি কাউকে টাকা ছাড়া বিশাল বাজার করতে দেবেন এটা কি হয় ? কিছু অর্থ তাকে দেন আর বাকিটা সে উপার্জন করে নেবে । আর বাজারের লিস্ট যাকে দেবেন না , তাকেও কিছু গিফট হিসেবে দেন । তারও কিছু ইচ্ছে আহ্লাদ থাকতে পারে । যেমনটি উল্লেখ করা হয়েছে ওপরের গল্পে । অর্থাৎ , যার দায়িত্ব তাকে বেশি দেন , যার দায়িত্ব নেই তাকে কিছু অর্থ দেন ; যাতে সে তার শখের জিনিস কিনতে পারে । মানুষের শখ বলে কিছু থাকে না ? থাকে তো । এখানে আপনার মনে বেশকিছু প্রশ্ন আসতে পারে বলে মনে হয় । মনে যে – প্রশ্নগুলো আসতে পারে তা হলো—
[ ১ ] মেনে নিলাম যে , অর্থনৈতিক সকল সমস্যা থেকে নারীকে মুক্তি দিয়ে এর সকল দায়িত্ব পুরুষের কাঁধে তুলে দেওয়া হয়েছে । তো , এটা কি নারীর প্রতি করুণা নয় ? নারী কি পুরুষের করুণা নিয়ে বেঁচে থাকবে ? নিজের পায়ে কি দাঁড়াবে না ? এতে কি তার মাথা নীচু হয়ে যাবে না ?
প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় , কোনো মেয়ের অর্থনৈতিক দায়িত্ব থেকে মুক্তি দিয়ে এর সকল দায়িত্ব পুরুষের কাঁধে তুলে দেওয়া হয়েছে , এটা তার ওপর কোনো করুণা নয় ; বরং তা নারীর অধিকার । আমরা জানি যে , অধিকার আর করুণা এক নয় । করুণাপ্রার্থী করুণা না পেলে তা পাওয়ার জন্য আইনগত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে না ; কিন্তু অধিকারবঞ্চিত ব্যক্তি তার অধিকার ফিরে পেতে আইনের সহায়তা চাইতে পারেন । যেমন , আপনি কোনো ভিক্ষুককে দান করলেন । সেটা তার প্রতি করুণা । আপনি ভিক্ষুককে দান না করলে তা পাওয়ার জন্য সে আইনগত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে না ; কিন্তু আপনি চাকরি করে যে – অর্থ বা বেতন পান তা আপনার জন্য মালিকের পক্ষ থেকে করুণা নয় , বরং তা আপনার অধিকার । সে আপনাকে ঠিকমতো বেতন দিতে বাধ্য । না দিলে আপনি আইনের সহায়তা চাইতে পারেন । ঠিক তেমনি নারীর জন্য পুরুষের থেকে খাদ্য , বস্ত্র , বাসস্থান , শিক্ষা , চিকিৎসা এবং নিরাপত্তা পাওয়াটা করুণা নয় , বরং এগুলো তার অধিকার । দায়িত্বশীল পুরুষ যদি তা পূরণ না করে তবে নারী চাইলে এগুলো পাওয়ার জন্য আইনের সহায়তা নিতে পারেন । এখানে একটু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই , দায়িত্বশীল পুরুষ থাকতে ইসলাম কোনো বৃদ্ধাশ্রমকে সমর্থন করে না ; বরং সরকার দায়িত্বশীল পুরুষকে দায়িত্বপালনে বাধ্য করবে । প্রয়োজন হলে সহযোগিতা দেবে । কারণ , বৃদ্ধাশ্রমে থাকা আর আপনজনের কাছে থাকা এক নয় । অনুভূতিটা সম্পূর্ণ আলাদা । নারীর এই অধিকার পাওয়ার পদ্ধতিটা খুবই সুন্দর । যেমন ধরুন , চাকরির বেতন থাকে নির্ধারিত । তার চেয়ে বেশি সে পাবে না । এই বেতন তার জন্য যথেষ্ট কি না , শ্রমিকের মৌলিক অধিকার পূরণ হচ্ছে কি না — তা মালিক সব সময় ভেবে দেখেন না । যদিও মালিকপক্ষের সেটা খেয়াল রাখা উচিত । হতে পারে তার বেতন পনেরো হাজার টাকা ; কিন্তু নিজের এবং পরিবারের সুন্দরভাবে চলতে প্রয়োজন বিশ হাজার টাকা । অন্যদিকে নারীর বেতন নির্দিষ্ট দশ বা বিশ হাজার টাকা নয় ; বরং তার যা লাগবে তাই স্বামী দেবে । এ যেন মালিক তার কর্মীকে কোনো বিশাল মার্কেটে নিয়ে বলছে — বেতন বাবদ তোমার যা যা লাগে সব নিয়ে নাও । কোনো রিস্ক নেই । ঠিক তেমনি ত্রীও তাই পাবে যা তার লাগে । তবে বিলাসিতা এর অন্তর্ভুক্ত নয় । স্বামীর আর্থিক অবস্থার ওপর নির্ভর করবে স্ত্রীর বিলাসিতা বা সবকিছুর মান ।
একজন নারী শুধু ঘরের কাজ করার পরও তার সবকিছু এবং স্বামীর থেকে সুন্দর পাওয়ার পূর্ণ অধিকার রাখে । কারণ , গর্ভধারণ করতে , সন্তান লালন – পালন কর সাংসারিক কাজ করতে তাকে যথেষ্ট শ্রম দিতে হয়েছে , কষ্ট সহ্য করতে কিছু লোক আছে , যারা বেতনের অঙ্ক হিসেবে ব্যক্তির কাজের মূল্যমান নি করতে আরাম বোধ করে । ফলে , নারীর বেতনহীন কাজ আর তাদের কাছে কাজ মনে হয় না । গৃহকে নারীর কর্মস্থল মনে হয় না । তারা ভাবে , যে – কাজে বেতন নেই , সে কাজ কোনো কাজই না । এমন লোকেদের ব্যাপারে একটি চমৎকার গল্প আছে । গল্পটি এমন— এক স্বামী অভিযোগ করেন যে , তিনি খুব ক্লান্ত … খুব খুব ক্লান্ত … এবং এ জন্য তিনি চান , তার স্ত্রীও যেন সংসারে টাকা উপার্জনে তাকে সাহায্য করেন ; কারণ , তিনি মনে করেন , তার স্ত্রী কোনো কাজ করে না । ‘ তো , এক মনোবিজ্ঞানীর সাথে তার নাতিদীর্ঘ একটি মিটিং হলো । মিটিংয়ে হওয়া সেই স্বামী ও মনোবিজ্ঞানীর আলাপন ছিল এমন— মনোবিজ্ঞানী : আপনি কী কাজ করেন ? স্বামী : আমি একটি ব্যাংকে চাকরি করি । মনোবিজ্ঞানী : আপনার স্ত্রী ? স্বামী : সে কোনো কাজ করে না । সে একজন গৃহিণী । মনোবিজ্ঞানী : আপনার পরিবারের সকালের নাস্তা কে বানায় ? স্বামী : কেন , আমার স্ত্রী । মনোবিজ্ঞানী : তিনি সকালে নাস্তা তৈরি করার জন্য কখন ঘুম থেকে ওঠেন ? স্বামী : সে ফজরের আজান দিলে ওঠে । কারণ , সে নামাজ পড়ে এবং ঘর পরিষ্কার করে । এরপর নাস্তা বানায় । মনোবিজ্ঞানী : আপনাদের কি কোনো সন্তান আছে ?
স্বামী : জি । এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে । মনোবিজ্ঞানী : আপনার সন্তানেরা স্কুলে যায় কীভাবে ? স্বামী : আমার স্ত্রী নিয়ে যায় । কারণ , তাকে তো আর কাজে যেতে হয় না । মনোবিজ্ঞানী : সন্তানদের স্কুলে দিয়ে আপনার স্ত্রী কী করেন ? স্বামী : তারপর সে বাজারে যায় । বাজার করে বাসায় নিয়ে তা পরবর্তী রান্নার প্রস্তুতি নেয় । তারপর অপরিচ্ছন্ন কাপড়চোপড় থাকলে সেগুলো পরিষ্কার করে । এছাড়া তো সে কোনো কাজ করে না । মনোবিজ্ঞানী : বিকালে আপনি কী করেন ? স্বামী : অফিস থেকে রওনা দিই । বন্ধের দিনে পার্কে গিয়ে বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করি , আড্ডা দিই । মনোবিজ্ঞানী : সন্ধ্যায় কাজ শেষে অফিস থেকে ফিরে আপনি কী করেন ? স্বামী : বিশ্রাম নিই । কারণ , সারা দিনের পরিশ্রমে আমি ভীষণ ক্লান্ত থাকি । মনোবিজ্ঞানী : আপনার স্ত্রী তখন কী করেন ? স্বামী : সে রাতের খাবার তৈরি করে , বাচ্চাদের খাওয়ায় , আমার খাবার সাজিয়ে দেয় , বাসনপত্র ধোয় , ঘর গুছিয়ে বাচ্চাদের ঘুম পাড়ায় । ওপরের গল্পটি থেকে কি মনে হয় আপনাদের , কে বেশি কাজ করেন ? একজন স্ত্রীর কাজ শুরু হয় ভোর থেকে , শেষ হয় গভীর রাতে । তবুও তাকে বলা হয় তিনি কিছুই করেন না । এটাই কি নারীর কাজের মূল্যায়ন ? আর কত তার কাজের অবমূল্যায়ন চলবে ? নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তার স্ত্রীদের সাথে মিশতেন , তখন তারা তাতে মুগ্ধ হতেন । নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের কাজ নিজেই করতেন । নিজের কাপড় নিজেই সেলাই করেন । বকরীর দুধ দোহন করতেন । তার মাঝে ছিল নম্রতা এবং বিনয় । ভদ্র ও মার্জিত আচরণের অধিকারী । তিনি ঘরে যতক্ষণ থাকতেন , খাওয়ার পেছনে পড়ে থাকতেন না । রান্নার কাজে সহযোগিতা করতেন । খাবার ভালো লাগলে খেতেন । ভালো না লাগলে নীরবে রেখে দিতেন । এ নিয়ে কোনো কথা বলতেন না । কারণ , একজন নারী চেষ্টা করেন ভাল করে রান্না করার । সেক্ষেত্রে সব সময় খাবার যে মজাদার হবে— তা নয় । তাকে কিছু বল কী হবে ? তার কাজেরও তো মূল্য দিতে হবে । [ 2 ] নারীকে যেখানে অর্ধেক দেওয়া হচ্ছে আর পুরুষকে তার দ্বিগুণ এ জন্য পুরুষ নারীর সকল প্রয়োজন পূরণ করবে । প্রশ্ন হলো , ধরুন , পুরুষ তার দায়িত্ব পালন করল না আর নারী পেল অর্ধেক । তো নারীর কী হবে ? তখন তো সে দুকূ দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরও বেশ সহজ । ইসলাম কোনো খণ্ডিত বক্তব্য বা আইন না ; বরং তা এমন ব্যাপক ও বিস্তৃত যে , সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্ম বিষয়ের আলোচনা করে , নির্দেশনা দেয় । এখন আপনি একটি অংশ মানবেন আরেকটি অংশ মা না , এমন করার সুযোগ নেই । অর্থাৎ , ইসলামি আইন দেখিয়ে দ্বিগুণ নেবেন আর দায়িত্ব পালন করবেন না তা হতে পারে না । আপনাকে সকল আইন – ই মানতে হবে । আল্লাহ বলেন- ‘ তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ইমান রাখো আর কিছু অংশ অস্বীকার করো ? সুতরাং , তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে ? আর কিয়ামতের দিনে তাদের কঠিনতম আজাবে নিক্ষেপ করা হবে । আর তোমরা যা করো , আল্লাহ সে – সম্পর্কে বেখবর নন ‘ । এ জন্যই ইসলামি রাষ্ট্র ও শাসনব্যবস্থা থাকা জরুরি যেখানে স্বয়ং প্রেসিডেন্ট মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য মানুষের দ্বারে যাবে , রাতের আরাম হারাম করে জাতির খেদমতে ঘুরে ফিরবে । খেয়াল করে দেখেন তো , ইসলামি রাষ্ট্র ও সমাজ এবং সেই সমাজের নেতারা কেমন ছিলেন । অর্ধবিশ্বের প্রেসিডেন্ট উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু । রাত হলেই মদিনার অলি – গলিতে হেঁটে মানুষের খোঁজ – খবর নেওয়াই যার রুটিনমাফিক কাজ । একদিন তিনি রাতের অন্ধকারে বের হলেন । পিছু নিলেন হজরত তালহা রাযিয়াল্লাহু আনহু । উদ্দেশ্য দেখি কী করেন উমার । দেখলেন , উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু একটি ঘরে প্রবেশ করছেন , এরপর আরেকটি ঘরে । বিষয়টি কী — তা জানার জন্য সকালে সেই বাড়িতে [ ১ ] সূরা বাকারা , আয়াত : ৮
গেলেন তালহা রাযিয়াল্লাহু আনহু । দেখলেন , এক অন্ধ বৃদ্ধ নারী । তাকে জিজ্ঞেস করলেন , আপনার কাছে উমারের কী কাজ ? বৃদ্ধা জবাব দিলেন , সে অমুক সময় থেকে অমুক সময় আমার সেবা – যত্ন করে । আমার জন্য যা যা কল্যাণকর তা নিয়ে আসে । এবং আমার কষ্টের কাজগুলো করে দেয় । ( ১ ) উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু বিধবাদের অধিকার আদায়ে এতই তৎপর ছিলেন যে , তিনি বলতেন , ‘ আল্লাহ তাআলা যদি আমাকে সহীহ – সালামতে রাখেন তবে ইরাকের কোনো বিধবাকে অভাবী রাখব না । কোনো বিধবা নারীর কারও কাছে যেন কিছু চাইতে না হয় — সেই ব্যবস্থা করব । [ ১ ] আজ ইসলামের সেই সোনালি শাসনব্যবস্থা না থাকার কারণে আমরা এগুলো যেমন চোখে দেখি না , আবার ইসলামের ইতিহাস না জানার কারণে সমস্যার সমাধানও বুঝি না । কথা হলো , একজন পুরুষ কোনোভাবেই তার দায়িত্ব পালনে অবহেলা করতে পারেন না । যদি কেউ অবহেলা করে তবে নারী আইনের সহায়তা পাবেন । আদালত পুরুষকে তার দায়িত্বপালনে বাধ্য করবে । এ হলো ইসলামি আইনের কথা । আর আপনি যদি পৃথিবীর সাধারণ অবস্থার কথা বলেন , তবে এমন কোন্ আইন আছে — যা মানুষ ভঙ্গ করে না ? আপনার জন্য যদি সমপরিমাণ সম্পত্তি দেওয়া হয় আর পুরুষেরা জোর করে নিয়ে যায় যেমনটি জাহেলি যুগে ছিল যে , কোনো নারী বা এতিম শিশু কোনো সম্পত্তি পাবে না । অন্যরা তা ছিনিয়ে নিত । তো কী হতো ? ওই ‘ কাজীর গোরু কেতাবে থাকা’র মতো । সুতরাং , দরকার হলো আইনের যথার্থ প্রয়োগ । তথা যে যা পাওয়ার তাকে তাই দেওয়ার আর যার যে – দায়িত্ব , তা – ই পালন করার । সকলের মাঝে ইসলাম তাকওয়া প্রতিষ্ঠার কথা বলে — যা মানুষকে তার দায়িত্ব পালনে এবং জবাবদিহিতায় উদ্বুদ্ধ করে । [ ৩ ] এই প্রশ্নটিও আপনার মনে জাগতে পারে — ইসলাম যে নারীর দায়িত্ব পুরুষের কাঁধে তুলে দিল , যেমন বাবা , ভাই বা সন্তানের ওপর — এখন এদের কেউই যদি না থাকে যেমন বৃদ্ধা – বন্ধা – বিধবা নারী তখন তার কী হবে ? [ ১ ] ড . আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবি , উমার ইবনুল খাত্তাব রাযিয়াল্লাহু আনহু , ১ ম খণ্ড , পৃষ্ঠা : 302-303 ( কালান্তর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ) [ 2 ] প্রাগুক্ত
তৃতীয় প্রশ্নেরও সমাধান দিয়েছে ইসলাম । এমন কোনো নারী হলে তার দায়িত্ব পড়বে তার দাদা , চাচা , নিকটাত্মীয় , সমাজ এবং প্রয়োজনে সরকারের সরকারের ওপর পড়লে এমতাবস্থায় সরকার চাইলে বৃদ্ধাশ্রমের ব্য পারে । সুতরাং , নারী ঝামেলামুক্ত । এরপরও যদি নারী আয় করতে চায় করতে পারে । নারীর আয়ের ব্যাপারে পর্দাপ্রথা ও প্রগতি ; অন্তরায় নাকি পরিপুরক প্রবন্ধে আলোচনা করেছি । স ৪ আপনার মনে আরও একটি প্রশ্নের উদয় হতে পারে , দেখা গেল কোনো নারী এখনো উত্তরাধিকার – সূত্রে সম্পদ পায়নি আবার তার মোহরের টাকাও যে – কোনোভাবে শেষ হয়ে গেছে । এখন তার স্বামী যখন যা দেবে তখনই সে তা পাবে । নিজের ইচ্ছেমতো কিছুই ব্যয় করতে পারবে না । এমন বিষয় তো নারীদের জন্য কষ্টের । কারণ , প্রায়ই বাচ্চারা তাদের মায়ের এটা – ওটার বায়না ধরে । আবার ছোট ভাই – বোন থাকলে তারা কিছু চাইতে পারে বা কিছু দিতে ইচ্ছে করে তাদের । তাছাড়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো বিশেষভাবে দান করতে বলেছেন নারীদের । তো এর সমাধানে ইসলাম কী বলে ? এক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা হলো , স্বামীর জন্য স্ত্রীকে হাতখরচ বাবদ কিছু অর্থ দেওয়া উচিত । এটি স্ত্রীর ন্যায্য দাবিও বটে । তবে তার পরিমাণ কত হবে ইসলাম তা নির্ধারণ করেনি ; বরং তা নির্ধারিত হবে স্বামীর আয় অনুপাতে । এই টাকা পারিবারিক খরচার বহির্ভূত হিসেবে গণ্য হবে । যাতে স্ত্রী তার ইচ্ছেমতো কিছু দান – খয়রাত করতে পারে , বাচ্চাদের আবদার পূরণ করতে পারে বা নিজের ছোট ভাই – বোনকে কিছু দিতে পারে । স্বামী যখন তার পরিবারের জন্য খরচের টাকা তার স্ত্রীকে দেবে তখন স্পষ্ট করে বলে দেবে যে , ‘ এটা পরিবারের ব্যয়ের জন্য ‘ আর ‘ এটা তোমার জন্য ; তুমি ইচ্ছেমতো ব্যয় করতে পারো । ‘ স্ত্রীর কাছে স্বামীর সম্পদ আমানতস্বরূপ । এখন তাকে তার আমানত রক্ষার সুযোগ দিতে হবে । নইলে সে আমানতের খেয়ানত করতে বাধ্য হবে । এটা হবে স্ত্রীর ওপর স্বামীর জুলুম । তাই স্বামীর জন্য ত্রীকে কিছু খরচ দিতে হবে ।[ ১ ] যা আমার পরবর্তী বইয়ে থাকছে — লেখক আমাদের দেশে পরিবারের জীবিত সদস্যদের জিনিস আলাদা করা থাকে না । পরে অনেক সময় এগুলো নিয়ে বিপত্তি ঘটে । স্ত্রীরা তার স্বামীর কাছে মোহর চাইতে লজ্জাবোধ করে । স্বামী তার স্ত্রীকে অনেক কিছুই দেন , কিন্তু কোনটা মোহর হিসেবে আর কোনটা হাদিয়া বা গিফট — তা বলে দেন না । ফলে পরে বিপত্তি ঘটে । যেমন , স্বামী মারা গেল বা তাদের বিবাহ – বিচ্ছেদ ঘটল । এখন স্বামীর বা তার পরিবারের বক্তব্য হলো , স্বামী যা দিয়েছে তা ছিল মোহর , অন্যদিকে সত্রীর দাবি হলো , তা মোহর নয় ; বরং স্বামীর দেওয়া হাদিয়া বা গিফট । মনে রাখা দরকার , স্ত্রীকে দিলেই তা মোহর হয়ে যায় না । মোহর হলো ঋণ , আর হাদিয়া দিলে ঋণ পরিশোধ হয় না । ধরুন , আপনি কারও কাছে এক হাজার টাকা পান আর আপনার সাথে দেখা হবার পর সে আপনাকে হোটেলে নিয়ে দুইশো টাকা খাওয়ালো । সে এ কথা আপনাকে বলেনি যে , এই দুইশো টাকা আপনাকে খাওয়াচ্ছি তা ওই ঋণ থেকে কাটা যাবে । পরে সে আপনাকে আটশো টাকা দিলে নেবেন ? না , নেবেন না । কারণ , তা আপনি ঋণ পরিশোধ হিসেবে গণ্যই করবেন না । সুতরাং , স্ত্রীকে অলংকার বা এ জাতীয় কোনোকিছু দেওয়ার সময় স্পষ্ট করে বলা উচিত , কেন তাকে দেওয়া হচ্ছে । সেটা হাদিয়া , না মোহর । আবার প্রদত্ত জিনিস শুধু ব্যবহারের জন্যেও স্ত্রীকে দিতে পারে যার মালিকানা স্বামীর থাকবে । আপনি ভাববেন যে , এটা আবার কীভাবে হতে পারে যে , স্বামী স্ত্রীকে অলংকার দিল তা হাদিয়া হবে না , মোহর হিসেবেও হবে না , হবে কেবল ব্যবহারের জন্য আর তার মালিকানা থাকবে স্বামীর । এটা কি সম্ভব ? হ্যাঁ , সম্ভব । যেমন— হোটেলে অবস্থানকালে আসবাবপত্র যা থাকে , তা কেবল ব্যবহারের জন্য , মালিকানা হোটেল মালিকেরই থাকে । বিষয়গুলো এখানে উল্লেখের আরেকটি হিকমত হলো , জাকাত আদায় । অর্থাৎ , মালিকানা যার , জাকাত আদায়ের দায়িত্ব তার । স্বামীর নিজের মালিকানায় থাকলে যদি তা নেসাব পরিমাণ হয় তবে স্বামী জাকাত আদায় করবে । আর স্ত্রীকে মালিক বানিয়ে দিলে স্ত্রী জাকাত আদায় করবে , যদি তা নেসাব পরিমাণ হয় । তবে স্ত্রীর পক্ষ হতে স্বামী জাকাত আদায় করে দিলেও চলবে । ইসলামের উত্তরাধিকার বিধান একটি মানবিক ও ন্যায়সঙ্গত বিধান । যেখানে প্রত্যেক শ্রেণির ওয়ারিসের তার প্রাপ্যাংশ লাভের নিশ্চয়তা রয়েছে । সত্য উপলব্ধিকারী অমুসলিম চিন্তাবিদ Gostaf Lobon ইসলামি উত্তরাধিকার – বিধানকে মূল্যায়ন করেছেন এভাবে- কুরআনে বর্ণিত উত্তরাধিকার বিধান বড়ই ন্যায়সঙ্গত ফরাসি ও ব্রিটিশ আইনের সাথে তুলনা করে আমার কাছে এ কথা যে , ইসলামি শরিয়ত বা বিধান স্ত্রীদের উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে এমন দিয়েছে — যার কোনো দৃষ্টান্ত খুজে পাওয়া যায় না আমাদের আইনসমূহে । ‘ হ্যাঁ , আল্লাহর দেওয়া বিধানের তুলনা কোনো মানবরচিত বিধানের সাথে চলে না । আল্লাহর আইন সর্বকালের , সর্বস্থানের এবং সকলের জন্য । আর আল্লাহর অনুসরণেই রয়েছে মানবতার মুক্তি , শান্তি ও সাফল্যের নিশ্চয়তা । [ ১ ] হুকুকুল মারআতি ফিল – মিরাস , মুহাম্মাদ আফীফ ফুরকান , পৃষ্ঠা : ২৪-২৫