নারী কেন পুরুষ হতে চায়

কিছু প্রশ্নের অবতারণায় চলুন উত্তর খুঁজি। প্রথমে প্রশ্নর দিকে যাওয়া যাক।
নারীর সমান অধিকার বলতে কি বুঝি আমরা?
সমান অধিকার ইসলাম দিয়েছে কি? তাসলিমা নাসরিন
কেন পুরুষ হতে চায়? তাহলে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বিরোধিতা কেন? যুক্তির মানদণ্ডে নারীর কেমন হওয়া উচিত?

সম্মানিত পাঠক,
নারী স্বাধীনতা বা সম-অধিকার এই শব্দগুলো খুবই চমৎকার। কিন্তু এর আড়ালে রয়েছে ভয়ংকর ফাঁদ। জাহেলী যুগে নারীকে ধোঁকা দেওয়া হত প্রকাশ্যে, নারীকে হত্যা করা হত অথবা জ্যান্ত পুঁতে ফেলা হত। তারা এগুলো প্রকাশ্যে করত এবং এগুলোকে অপরাধ মনে করত না। ইসলামের আবির্ভাবের ফলে নারী জাতি এই ধরণের নির্যাতন থেকে রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু সেই জাহেলী যুগের বর্বর মানুষগুলোর আদর্শ এখনও অনেক মানুষ ধারণ করছে। তারা এখন আর নারীকে প্রকাশ্যে ধোঁকা দেয় না। তারা এখন আর নারীকে প্রকাশ্যে পতিতা বানায় না। তারা এখন আর নারীকে প্রকাশ্যে হত্যা করে না। তারা এখন আর প্রকাশ্যে ভোগ্যবস্তু বানায় না। সামান্য কৌশল অবলম্বন করে মাত্র। যেই নারী নিজের শ্বশুর-শাশুড়ীকে রান্না করে খাওয়ালে কথার ঝড় উঠতো বউ মানেই দাসী। শুধু তাই নয় বেশ্যা বলে আখ্যায়িত করছে রেফারেন্সঃ

সেই নারী দিব্বি হোটেলে অসংখ্য মানুষের রান্নার কাজ করে খাওয়াচ্ছে। মিষ্টি হেসে তাদের মন জুগিয়ে খাবার পরিবেশন করছে। এখন সেই নারী আর ভোগ্যপণ্য হয় না। নাস্তিক্যধর্মে পতিতা একটি সম্মানিত কাজ। জাহেলী যুগে নারীকে পতিতা বানানো হত। বর্তমান অধুনা যুগেও নাস্তিক ধার্মিকেরা নারীকে পতিতা বলে সম্মানিত করার ভান ধরেছে। বলুন তো, এটাই কি নারীর অধিকার? একেই বলে নারীর সম-অধিকারের নামে কৌশলে ভোগ করার এক নব্যপদ্ধতি।

চোখের সামনে যখন নাস্তিক ধর্ম-ব্যবসায়ীদের দেখি তারা নারীদের এইভাবে ধোঁকা দিচ্ছে। তখনই আমার কলম দ্বারা লিখনীতে বসে যেতে ইচ্ছে হয়। কিছু বলতে ইচ্ছে করে, কিছু জানিয়ে দিতে ইচ্ছে করে। আমরা যারা নারীর প্রকৃত সম্মান নিয়ে চিন্তা বা গবেষণা করি আমাদের কাছে নাস্তিকদের এই ধোঁকাগুলো খুবই পরিষ্কার। তাই আশাকরি লেখাটি সম্পূর্ণ মনযোগের সহিত পড়বেন।

নারীর সম-অধিকার বলতে কি বুঝি আমরা?
নারী ও পুরুষ শব্দদ্বয়ের মাঝে যেমন শাব্দিক পার্থক্য আছে। ঠিক তেমনই নারী ও পুরুষের মাঝে শারীরিক পার্থক্যও বিদ্যমান। এই পার্থক্যগুলো আমি-আপনি সবাই মেনে নিতে বাধ্য। লেখক হুমায়ুন আজাদ দাবি করেছেন যে, নারী-পুরুষ উভয়েই মানুষ। ধার্মিকেরা নাকি নারীকে মানুষ মনে করে না।এমন কি একটা মারাত্তক ভুল দাবি করেছে কেও নাকি নারী হয়ে জন্ম নেয় না। রেফারেন্স

আচ্ছা বলুন তো আজ পর্যন্ত নারীকে কেউ কি মানুষ মনে করেনি? হ্যাঁ, নারীকে আমরা সবাই মানুষ মনে করি।কিন্তু কোন নাস্তিক ধার্মিক জীবনেও নারীকে মানুষ মনে করেনি। তাই তাদের ভেতরে নারীভোগ করার মানসিকতা জাগ্রত হয়েছে। আম গাছ এবং কাঠাল গাছ দুটোই গাছ। তার মানে উক্ত গাছগুলোকে স্বীয় নামে কি ডাকা যাবে না? নিঃসন্দেহে ডাকা যাবে। ঠিক তেমনই মানুষ দুই প্রকার নারী ও পুরুষ। এখানে শারীরিক পার্থক্য রয়েছে। তবে সত্ত্বাগত দিক থেকে উভয়ই মানুষ। শারীরিক পার্থক্যের দিক থেকেই চলে আসছে কর্মসংস্থান ছাড়াও বিভিন্ন গ্রহণযোগ্য পার্থক্য। একজন মেয়ে যেই অধিকার পাবে একজন মা কি সেই অধিকার পাবে? তা কখনো হতে পারে না। উভয়ের মধ্যে অবশ্যই পার্থক্য আছে। এই পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও যারা সমান অধিকারের কথা বলে তারা মূলত নারীর ন্যায্য অধিকারকে ধ্বংস করতে চায়। সুতরাং সমান অধিকারের শ্লোগান চরম ভয়ংকর ও নারী বিরোধী। সমান অধিকারের শ্লোগানের বিরুদ্ধে প্রত্যেক নারীরই আন্দোলন করা উচিত।
নারী অধিকারের শ্লোগান যদি তুলতেই হয়। তাহলে তা হওয়া উচিত এরকম- “আর নয় সমান অধিকার, আমরা চাই ন্যায্য অধিকার”।

ইসলাম নারীকে কি ন্যায্য অধিকার দিয়েছে?
ইসলাম কখনো নারী-পুরুষকে সমানভাবে অধিকার দিয়েছে । আবার কখনো নারীকে পুরুষের উপর অধিকার বেশি দিয়েছে বা কখনো পুরুষকে নারীর উপরে বেশি অধিকার দিয়েছে। এটাকে বলে ন্যায্য অধিকার।
সমান অধিকারে নারী পুরুষঃ

إني جاعل في الأرض خليفة
অনুবাদঃ পৃথিবীতে আমি খলিফা বানাতে চাই। (সূরা বাকারা ২:৩০)
এখানে স্পষ্ট নারী ও পুরুষকে সমানভাবে আল্লাহর খলিফা হিসেবে স্বয়ং আল্লাহ ঘোষণা করেছেন।
নিম্নের আয়াতে নারী ও পুরুষের আমলের ফলাফল সমানের কথা বলা হচ্ছে।

و من عمل صلحا من ذكر أو أنثى و هو مؤمن فأؤلئك يدخلون الجنة يرزقون فيها بغير حساب
অনুবাদঃ আর যে কোন পুরুষ বা নারী নেক আমল করবে, আর সে মুমিন হবে, তাহলে তারা জান্নাতে দাখেল হবে এবং সেখানে তাদেরকে বেলা হিসাব রিযিক দান করা হবে। (সূরা মুমিন : ৪০)

فاستجاب لهم ربهم أني لا أضيع عمل عمل منكم من ذكر أو أنثى, بعضكم من بعض
অনুবাদঃ অনন্তর তাদের প্রতিপালক তাদের দু‘আ কবুল করলেন (আর বললেন) যে, আমি তোমাদের কোন আমলকারীর আমল নষ্ট করবো না, সে পুরুষ হোক, বা নারী। তোমরা তো পরস্পরের অংশবিশেষ। (সূরা আলে ইমরান : ১৯৫)

إنما النساء شقائق الرجال
অনুবাদঃ অর্থাৎ নারীরা হলো পুরুষের সমতুল্য। (সুনানে আবু দাউদ ১/৩১)
যে ব্যক্তি কন্যসন্তানকে জ্যান্ত দাফন করবে না এবং তার অমর্যাদা করবে না এবং পুত্রসন্তানকে তার উপর অগ্রাধিকার দেবে না আল্লাহ তাকে জান্নাতে দাখেল করবেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৫১০৩)

নারীকে পুরুষের উপর বেশি অধিকারঃ
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
و عاشروهن بالمعروف, فإن كرهتموهن فعسى أن تكرهوا شيأ و يجعل الله فيه خيرا كثيرا
অনুবাদঃ আর তোমরা স্ত্রীলোকদের সঙ্গে বসবাস করো সদাচারের সাথে। আর যদি (কোন কারণে) তোমরা তাদেরকে অপছন্দ করো তাহলে হতে পারে যে, তোমরা এমন কোন কিছুকে অপছন্দ করলে, আর আল্লাহ তাতে প্রচুর কল্যাণ রেখে দিলেন। (সূরা নিসা : ১৯)

ووصينا الانسان بوالديه احسانا حملته امه كرها ووضعته كرها
অনুবাদঃ ‘আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচারের আদেশ করেছি। (কারণ) তার মা তাকে কষ্টের সঙ্গে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্টের সঙ্গে প্রসব করেছে।’ (সূরা আহকাফ : ১৫)
উক্ত আয়াতে নারীর কষ্টের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু একজন বাবার কষ্টের কথা উল্লেখ করা নেই। এখানে একজন মায়ের সম্মানের হক বেশি সেটা বোঝানো হয়েছে। আমরা হাদিস শরিফে গেলে আরো স্পষ্ট হবো যে, একজন নারী মা হওয়ায় কত বেশি সম্মান পায় পুরুষ বাবার তুলনায়।
হাদিস শরীফে এসেছে, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার সদাচারের বেশী হকদার কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সাহাবী বললেন, এর পর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সাহাবী বললেন, এর পর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সাহাবী বললেন, এর পর কে? তখন নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এর পর তোমার বাবা। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৯৭১)
এক সাহাবী আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি জিহাদে গমন করতে চাই। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি মা আছেন? সাহাবী বললেন, আছেন। তখন তিনি বললেন, যাও তার কাছে বসে থাকো, কেননা জান্নাত তার পায়েরই কাছে। (মুসনাদে আহমদ ৩/৪২৯; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১৩/৮০)

অন্য বর্ণনায় আছে, ‘জান্নাত হলো মায়েদের কদমের নীচে।’ (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ৭৩৩০)

و عاشروهن بالمعروف, فإن كرهتموهن فعسى أن تكرهوا شيأ و يجعل الله فيه خيرا كثيرا
অনুবাদঃ তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সে-ই যে তার স্ত্রীদের জন্য তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম, আর আমি তোমাদের মধ্যে আমার স্ত্রীদের জন্য সর্বোত্তম। (সুনানে ইবনে মাজাহ, পৃ. ১৪২; জামে তিরমিযী, হাদীস : ১১৬২)

নারী(তাসলিমা) কেন পুরুষ হতে চায়ঃ
সারাটা জীবন তাসলিমা নাসরিন পুরুষ তান্ত্রিকতাকে ঘৃণা করেছেন। পুরুষত্ব বিষয়টাকে সে এতটা ঘৃণা করেছে যে তা উদ্ধৃত করার প্রয়োজনবোধ হলেও লেখাটির সংক্ষেপকরণের বিবেচনায় তা বাদ দেওয়া হয়েছে।
এই ধরণের নারীবাদীরা পুরুষ তান্ত্রিকতা ঘৃণা করলেও তারা নিজেরাই পুরুষ হতে চেয়েছেন। আচ্ছা নারী অধিকার মেনে তো এরকম দাবিও করতে পারতেন যে পুরুষেরা আজ থেকে নারীর মত চলবে। কিন্তু তা না করে সব নাস্তিক ধার্মিকদের দাবি হচ্ছে নারীরা পুরুষের মত হবে। লেখক তাসলিমা নাসরিন আমার মেয়ে বেলা বইয়ে উল্লেখ করেছেন যে, তার হায়েজ হওয়া নিয়ে তিনি খুবই লজ্জিত এবং বারবার চেয়েছেন তার যদি হায়েজ না হত।
রেফারেন্সঃ

 

তিনি রাতে এটাও ভাবতেন তিনি যদি সকালে পুরুষ হয়ে যেতেন।
রেফারেন্সঃ

একজন নারী নিজেই পুরুষ হওয়ার প্রত্যাশায় বারংবার বিভোর থেকেছেন। সে কি করে নারীবাদী হতে পারে! যেই নারী লেখক নিজের নারীত্ব নিয়ে চরম লজ্জিত সেই নারী কখনোই নারীর অধিকারের পক্ষে সরব হতে পারে না। তাসলিমা নাসরিন তার অদ্যাবধি জীবনে পুরুষ হওয়ার এক বিশেষ আকাঙ্ক্ষা লালন করেছে।
একবার এক অনুষ্ঠানে একজন পুরুষ অসংখ্য নারীর সাথে প্রেম করা কথা বলেছিল। সেখানেও তাসলিমা নাসরিন নিজেকে পুরুষ হিসেবে দেখতে চেয়েছেন।
রেফারেন্সঃ

নারীবাদ মানে যদি এই তাদের অবস্থা হয় তাহলে তাদের জীবনে নিজেরাই নিজেদের ভোগ্যপণ্য হিসেবে সাব্যস্ত করে রেখে গেছে ও যাচ্ছে। অসংখ্য পুরুষ তাদেরকে ব্যবহার করবে এটাই যদি তাদের কামনা হয়ে থাকে। তাহলে জীবনভর তাসলিমা কাদের দোষারোপ করে গেছেন? আমি তো মনে করি তাসলিমার বিরুদ্ধে প্রত্যেক নারী নাস্তিকের জেগে ওঠা উচিত। আপনি যদি তাসলিমা নাসরিন এর ফেইসবুক প্রোফাইলে যান দেখবেন সে সিঙ্গেল। এত মানুষের সাথে অন্তরঙ্গতার পরেও যে সঙ্গীহীন জীবন কাটাতে বাধ্য হয়। সে কিভাবে অন্যের ভালো চায়?

যুক্তির মানদণ্ডে নারীর কেমন হওয়া উচিতঃ
সম্মানিত নারীসমাজ, আপনাদের উদ্দেশ্য আমার কিছু বলার প্রয়োজনবোধ করছি। নাস্তিক্যধর্ম আমাদের কখনো অধিকার দিতে পারে না। নাস্তিক্যধর্ম নারীকে জীবনভর ভোগ্যপণ্য হিসেবে রাখতে চায়। অধিকারের নামে কৌশলে নারীকে পতিতা বানাতে চায়। নাস্তিক্যধর্মের এইসব রচিত বর্বর বিধানসমূহ সকল নাস্তিকের ত্যাগ করা উচিত। নাস্তিকতার এই সমস্ত কুসংস্কার থেকে বের হতে পারলেই একজন নারী আলোর পথ দেখতে পারবে।

আমার কিছু প্রশ্নঃ
তাসলিমা কেন পুরুষ হতে চায় যদি পুরুষ তান্ত্রিকতা খারাপ হয়ে থাকে?
তাসলিমা নাসরিন নারীকে পুরুষ বানাতে চাইলো, কিন্তু পুরুষকে কেন নারী বানাতে চাইলো না?
নারী পুরুষ যদি সমান হয়ে থাকে। প্রকৃতি কেন উভয়ের মাঝে শারীরিক পার্থক্য সৃষ্টি করলো?
নারী-পুরুষ সমান এই আন্দোলন সর্বপ্রথম প্রকৃতির বিরুদ্ধে করা উচিত নয় কি? প্রকৃতির বিরুদ্ধে নাস্তিক ধার্মিকেরা কেন আন্দোলন করে না?
জগতে সবই যদি বস্তু হয়ে থাকে তাহলে প্রকৃতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করা কেন যুক্তিযুক্ত নয়?
প্রকৃতির বিরুদ্ধে আমরা কি কি সাইন্টিফিক ব্যবস্থা নিতে পারি? যদি প্রকৃতির বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিয়ে তাসলিমার মত চিন্তাশীল সকল নারী রাতারাতি পুরুষ হয়ে যায় তাহলে বংশ বিস্তার কিভাবে ঘটবে?

তাহলে কি তসলিমা বা নারীবাদীরা বংশ বিস্তার বন্ধ করতে চায়?

যদি বন্ধ করতে চায় তার পক্ষে কি কি যুক্তি?

আর যদি মানব জাতির বংশ বিস্তার, বন্ধ করতে না চায়, তাহলে কিভাবে বংশ বিস্তার হবে? আমরা জানতে চাই

Facebook
WhatsApp
X
Email